কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা ও কম্পোস্ট সারের ব্যবহার


কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন,তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমি আপনাকে কম্পোস্ট সারের উপকারিতা ও কম্পোস্ট সারের ব্যবহার সম্পর্কে জানাব।

কম্পোস্ট-সারের-১০টি-উপকারিতা

আপনি যদি কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান, তবে আমার এই আর্টিকেলের সাথে থাকুন। আজকের এই আর্টিকেলে আমি কম্পোস্ত সার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পেইজ সুচীপত্রঃ কম্পোস্ট সারের ১০টি  উপকারিতা ও তার ব্যবহার।

কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা 

কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি কম্পোস্ট সারের উপকার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমার লেখা আর্টিকেলের সাথে থাকুন। কম্পোস্ট এমন একটি সার যা উদ্ভিদের বিভিন্ন উপাদান এবং রাসায়নিক সারের মিশ্রন। কম্পোস্ট সার মাটির ভৌতিক জৈবিক ও রাসায়নিক পদার্থকে উন্নত করে। 

++++কম্পোস্ট সার-খড়কুটা,আবর্জনা খাবারের অবশিষ্ট অংশ বা ঝুটা, কচুরিপানা, গোচেনা বা গবাদিপশুর মল্মুত্র, গাছের পাতা, বিভিন্ন পচনশীল দ্রব্য ও রাসায়নিক সার দিয়ে তৈরি করা হয়। চলুন কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকার সম্পর্কে বিস্বারিত আলোচনা করি।কম্পস্ট সারের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। আপনি কি জানতে চাচ্ছেন কম্পোস্ট সারের প্রকার গুলো কি কি চলুন তাহলে আলোচনা করা যাক-

  • খামারি কমপোস্ট সার।
  • ভার্মি কম্পোস্ট সার বা ট্রাইকো কম্পোস্ট সার।
  • সবুজ কম্পোস্ট সার ইত্যাদি

খামারি কম্পোস্ট সারঃ খামারের বর্জ্য খামারের বর্জ্য তথা গরু-ছাগলের মলমতো দিয়ে যে সার তৈরি হয় তাকে খামারি সার বলা হয়। খামারি সার খামারি সার ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

ভার্মি কম্পোস্ট সারঃ গোবরের সাথে কেঁচো মিশিয়ে যে সার তৈরি করা হয়। তাকে ভার্মি কম্পোস্টেসার বলা হয়। ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

সবুজ কম্পোস্ট সারঃ সবুজ জাতীয় ঘাস লতাপাতা তরকারির অবশিষ্ট অংশ,কচুরি পানা পঁচিয়ে যে সার তৈরি হয় তাকেই বলা হয় সবুজ কম্পোস্ট সার।

খড়কুড়া আবর্জনা তরকারি কাটার অবশিষ্ট অংশ, খামারের বজ্র, সবুজ ঘাস, লতা-পাতা কচুরিপানা মিশিয়ে রাসায়নিক সার দিয়ে পচিয়ে তৈরি কম্পোস্ট সার, মাটির ভৌতিক জৈবিক ও রাসায়নিক পদার্থকে উন্নত করে। যার ফলে মাটি ফসল চাষের জন্য উপযোগী হয়। কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব বজায় থাকে। এতে করে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব। কম্পোস্ট সার ব্যবহারে উৎপাদিত ফসল মানুষের ব্যবহারে উপযোগী। এতে করে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না।

আরো পড়ুনঃ কাগজে মোড়ানো খাবার স্বাস্থ্যঝুকি

আপনি নিশ্চয় জানেন, রাসায়নিক সারের মূল্য হাতের নাগালের বাহিরে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল ফলাতে গিয়ে আমাদের হেরফের খেতে হয়। ফসলের কাংখিত মুল্য পাই না, তখন আমাদের মনে আসে নানা ভাবনা। আমাদের এসব ভাবনা থেকে মুক্ত দিতে পারে একমাত্র কম্পোস্ট সার। রাসায়নিক সার ও কম্পোস্ট সার ব্যবহারে নীতিগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। চলুন জানা যাক পার্থক্যগুলো কি কি-

 কম্পোস্ট সার তুলনা মূলক ভাবে একটি উন্নত সার

  • কম্পোস্ট সার তুলনামূলক একটি ভালো সার। রাসায়নিক সারের তুলনায় কম্পোস্ট সার ব্যবহারে কিছু বৈশিস্ট গত পার্থক্য রয়েছে। চলুন আজ আমি আপনাদের সামনে কম্পোস্ট সার ও রাসায়নিক সারের পার্থক্য গুলো বিস্তারিত আলোচনা করব। 
  • রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নস্ট হয়ে যায়, ফলে ফসল চাষের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির অম্লত্ব ওন ক্ষরত্ব বজায় থাকে,ফলে ফসল চাষের অধিক উপযোগী হয়।
  • কম্পোস্ট সার ও বাজার  থেকে আনার ঝামেলা থাকে, কিন্তু কম্পোস্ট সার সব সময় হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।
  • কম্পোস্ট সার ফসল চাষের জন্য বেশি উপযোগী কিন্তু রাসায়নিক সার ততটা উপযোগী নয়।
  • কম্পোস্ট সার ব্যবহারে উৎপাদিত ফসল সাস্থ্য সম্মত, রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা বাড়ায় কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যবহারে সাস্থ্য ঝুকি ্বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
  • কম্পোস্ট সার খড় কুটা, আবর্জনা, সবুজ ঘাস, লতা-পাতা, খামারের গোবর, বিস্টা, ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, তরকারির অবশিষ্ট অংশ দিয়ে তৈরী কিন্তু রাসায়নিক সার রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরী।
  • এখন আপনি বলুন, কৃষি কাজে আমরা কোন সার ব্যবহার করব।কোন সারের গুনগত মান ভালো, কোন সার মাটির পুস্টি মান বজায় রাখে এসবের একটায় উত্তর কম্পোস্ট সার। আসুন আমরা সবাই  কম্পোস্ট সার ব্যবহার করি এবং অন্যকে ব্যবহারে উৎসাহিত করি।

কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা

1. কম্পোস্ট সার ব্যবহারে অনেক উপকারিতা রয়েছে।রাসায়নিক সারের তুলনায় কম্পোস্ট সারের গুনগত মান অনেক ভালো। কম্পোস্ট এক প্রকারের কার্বন সমৃদ্ধ সার।যার ব্যবহারে উদ্ভিদের খাদ্য সরবরাহ ও কার্যক্ষমতা বহুনে বৃদ্ধি পায় এবং ফসল উৎপাদনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

2. রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির পিএইচ মান কমে যায় ফলে পানির ধারণক্ষমতা থাকে না মাটিকে শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায় কিন্তু কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির পিএইচ মানকে উন্নত করে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসল পুষ্ট ও সুস্থ থাকে। উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়ে যায় বহু গুনে।

3. রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটি শুষ্ক হয়ে যায় ফসল উৎপাদনের উপযোগী হারিয়ে ফেলে কিন্তু কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির হারানো জীবনকে ফিরিয়ে আনে, পিএস মান উন্নত কর্‌ বায়ু চলাচলে উপযোগী করে বেলে মাটিকে দোয়াশ মাটিতে পরিণত করে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন,দোয়াশ মাটি ফসল চাষের জন্য উপযোগী।

4. কম্পোস্টের ব্যবহারের ফলে মাটিতে বায়ু চলাচলের ছিদ্র বাড়িয়ে দেয় ফলে মাটির অম্লত্ব বাড়িয়ে, ক্ষরত্ব কমিয়ে দেয়,ফলে মাটি সরল মাটিতে পরিণত হয়। এতে করে মাট্র উপকারি অণুজীবের সংখ্যা বেড়ে যায় ফলে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বহু গুণে বাড়তে থাকে।

5. কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে অনেক কৃষক লাভবান হচ্ছে এতে করে সারের চাহিদা দিন দিন বিদ্ধি পাচ্ছে এবং রাসায়নিক সারের চাহিদা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারে ফসলের রোগ বালাই বেশি হয়। কিন্তু কম্পোস্ট সার রোগ বালাই প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।

6. কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে মাটি আদর্শ মাটিতে পরিনত হয়, আর আদর্শ মাটি ফসল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আদর্শ মাটির পানির ধারন ক্ষমতা বেশি।কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে কৃষকের মনে নতুন আস্থার সঞ্চার হয়। অধিক ফলনের কারনে কৃষকের মনে নতুন উদ্দ্যেগ সৃষ্টি হয়।

7. কম্পোস্ট সারের চাহিদা ব্যাপক ভাবে বেড়েই চলেছে। কেননা কম্পোস্ট সার ব্যবহারে ফসল ভালো হয়, রোগ বালায়ের ঝামেলা তুলনা মূলক কম হয়। মাটির পুস্টির মান বজায় থাকে, আমাদের উপহার দেয় সুন্দর ফসল।

8. উৎপাদনের জন্য কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা নিরাপদ এই সারে ব্যবহার করে রোগবালায় নিয়ন্ত্রণ করা যায় সাথে উৎপাদন ও বৃদ্ধি করা যায়। দেখা গেছে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রকল্প বেড়ে গেছে।

9. কম্পোস্ট সার একপ্রকারের জৈব সার যার মূল উৎপাদন টাইকোড্রামা নামক এক ধরনের উপকারী ছত্রাক দ্বারা তৈরী, বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনে এ সার ব্যবহার করলে আপনি ভালো ফসল পেতে পারেন। কম্পোস্ট সার মাটির গঠন উন্নত করে, এতে করে মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ে।

10. কম্পোস্ট সার উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকারক ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া ও নেমাটোডকে মেরে ফেলে, বিভিন্ন রোগ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায় ফলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন সহ ফসলের গুণগতমান বৃদ্ধি করে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে.

কম্পোস্ট সার  আমরা কেন ব্যবহার করব

কম্পোস্ট সার আমরা কেন ব্যবহার করব এ কথার উত্তর জানতে চাওয়া খুবই সহজ। কেননা ফসল চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ হচ্ছে মাটি। হাজার বছর ধরে মানুষ মাটির বুক চিরে ফসল ফলে আসছে নানা উপায়ে। ক্রমাগত চাষে মাটি হারিয়েছে তার উর্বরতা শক্তি। রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়েছে এক ভয়াবহ মাত্রায়।

মাটিতে থাকা কত জীব ও কেঁচো মরেছে আশঙ্কাজনক ভাবে সে কারণে মাটি হারিয়েছে তার যৌবন। এ অবস্থায় মাটিকে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সক্ষম হয়েছে কম্পোস্ট সার। মাটির হারানো যৌবন ফিরে দিতে কম্পোস্ট  সারের বিকল্প নাই। কম্পোস্ট সার একটি উন্নত মানের জৈব সার। গৃহস্থালি প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা, খড়কুটা, গোবর, হাস মুরগির বিষ্ঠা, ফসলের ফেলে দেওয়া অংশ। 

এ সব একটি নির্দিষ্ট গর্তে ফেলে বিশেষ নিয়মে পচে কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়। পচন ক্রিয়ার শেষে এক পর্যায়ে জৈব পদার্থ হিউমাসে পরিণত হয়। নিশ্চয় এতক্ষনে আ্মি আপনাকে কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানাতে সক্ষম হয়েছি।

কম্পোস্ট সার তৈরি করার বিভিন্ন উপায় 

কম্পোস্ট সার তৈরি করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। আমরা বিভিন্ন উপায়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করতে পারি। সবুজ ঘাস, লতাপাতা কচুরিপানা ফসলের উচ্ছিষ্ট অংশ দিয়ে তৈরি হয় কম্পোস্ট সার। এটাকে আমরা সবুজ সারও বলে থাকি।

কম্পোস্ট-সার-তৈরি-করার-বিভিন্ন-উপায়

খড় কুটা, আবর্জনা, লতা পাতা, গরুর খাবারের উচ্ছিস্ট, তরকারীর ফেলে দেয়া অংশ ছাড়াও শুধু খামারের কাচা গবর ও পরিমান মতো কেচো দিয়ে এক প্রকারের সার তৈরী করা হয়,তাকে বলে ভার্মি কম্পোস্ট সার। ভার্মি কম্পোস্ত সারের জন্য মাটির গর্তের চেয়ে হাউস কিম্বা বড় ড্রামে করে ভালো হয়।

খামারের গবর, গোচেনা, মুরগির বিষ্ঠাতে কেঁচো প্রয়োগ করে এক প্রকারের সার তৈরি করা হয়, এটাকে ভার্মি কম্পোস্ট সার বলে। কম্পোস্ট সারকে আমরা সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে তৈরি করতে পারি। একটি গর্ত পদ্ধতি অন্যটি স্তুপ পদ্ধতি।

গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করার নিয়ম 

গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করব কিভাবে আমরা তা জেনে নিই।

  • প্রথমে একটি নির্দিষ্ট জায়গা নির্বাচন করতে হবে। গোয়াল ঘরের আশেপাশে বা বাড়ির আশেপাশের কোন এক জায়গায় গাছের ছায়ায় যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
  • নির্দিষ্ট জায়গাতে দুটি গর্ত করতে হবে গর্তটি দেড় মিটার প্রস্থ ছোয়া মিটার গভীর এবং প্রয়োজনমতো দৈর্ঘ্যের হলেই চলবে।
  • গর্তের চারপাশে সামান্য উঁচু করতে হবে, যাতে করে বৃষ্টির পানি ঢুকতে না পারে। গর্তের ভিতর নিচের অংশে মোটা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে।
  • গোয়াল ঘরের প্রতিদিনের গোবর, গবাদি পশুর খাবারের উচ্ছিষ্ট, ফসলের ফেলে দেওয়া অংশ, কাঠের গুড়া, কচুরিপানা, লতাপাতা এসব প্রথম গর্তে ১৫ সেন্টিমিটার পুরো করে ফেলতে হবে।
  • এরপর স্তরের উপরে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ২০০গ্রাম টিএসপি ছিটিয়ে দিতে হবে। 
  • এর উপরে গবর ও কাদামাটি মিশিয়ে ৫ সেন্টিমিটার পুরো করে প্রলেপ দিতে হবে, যতদিন পর্যন্ত গর্তটি ভরাট না হয় ততদিন পর্যন্ত গোবর, গবাদি পশুর উচ্ছিষ্ট, ফসলের ফেলে দেওয়া অংশ, কাঠের গুড়া্ লতা,পাতা এসব দিয়ে একই নিয়মে ভরাট করতে হবে। 
  • ভরাট শেষ হয়ে গেলে গর্তের উপরের অংশ গোবর মেশানো কাদামাটির প্রলেপ দিতে হবে।
  • প্রথম গর্তটি ভরাট হলে একই নিয়মে দ্বিতীয় গর্তটি ভরাটের কাজ শুরু করতে হবে। ভরাটের কাজ চলার সময় প্রথম গর্তের পচন ক্রিয়া চলতে থাকবে।
  • গর্তের উপরে চালা করে দিতে হবে। যাতে করে রোদ ও বৃষ্টি থেকে কম্পোস্ট গাদাকে রক্ষা করা যায়।
  • পচন কাজ দ্রুত করতে হলে ৩০ দিন পর পর কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জৈব উপকরণগুলো ওলট পালট করে দিতে হবে। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে গর্তের উপকরণ পচিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হয়ে যাবে।
  • এতক্ষণে আমরা গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরির নিয়ম জানলাম। এখন আসি স্তুপ পদ্ধতিতে কিভাবে কম্পোস্ট সার তৈরি করব।

স্তুপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করার নিয়ম

বৃষ্টির মৌসুমে যেসব এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় সেসব এলাকায় স্তুপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরির সুবিধা অনেক বেশি। বছর আশেপাশে জমির এক কোণে পুকুরের পাড়ে কিংবা রোবার ধারে যেখানে বর্ষার পানি নাগাল না পায় এমন ছায়াযুক্ত স্থানে তৈরি করতে হবে আর বর্ষা মৌসুমে প্রচুর কচুরিপানা পাওয়া যায়। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • প্রথমে মাটির উপরে ৩ মিটার দৈর্ঘ্য দেড় মিটার প্রস্থ এবং সোয়ামিটার উঁচু হয় এমন একটি গাদা তৈরীর পরিকল্পনা করি।
  • এবার কচুরিপানা তুলে এটাকে আধা শুকনো করি কচুরিপানা ও খড় বেশি লম্বা হলে এটাকে 15 সেন্টিমিটার পরিমাণে কাটি।
  • এবার কচুরিপানা খড় লতাপাতা সহজে পচে যায় এমন জৈব পদার্থ দিয়ে পনেরো সেন্টিমিটার উঁচু করে একটি স্তুপ তৈরি করি।
  • এই স্তূপের উপরে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া 200 গ্রামটি এসপি সার ছিটিয়ে দেই। এতে করে পচনের কাজ খুবই দ্রুত হয়।
  • ৫ সেন্টিমিটার পুরু করে গোবর এবং কাদামাটির প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেই। এমন ভাবে এক একই নিয়মে একই পরিমাণ কচুরিপানা অন্যান্য জৈব পদার্থ সহ ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ২০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করে স্তুপ বানাতে হবে।
  • এরপর পাঁচ সেন্টিমিটার পুরো করে গোবর ও কাদামাটি মিশ্রণের প্রলেপ দেই।
  • স্তূপটি সোয়া মিটার উঁচু হলে সম্পূর্ণ গাঁদাটি গবর মিশ্রিত কাদামাটি প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেই।
  • গাদা উপরে চালার ব্যবস্থা করি যাতে করে রোদ বৃষ্টি কোনটি ঢুকতে না পারে।
  • গাধা তৈরির কাজ শেষ হবার এক সপ্তাহ পর একটি শক্ত কাঠি গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে পরীক্ষা করি গাধাটি বেশি ভেজা আছে কিনা তা যাচাই করে। বেশি ভেজা মনে হলে গাধার উপরে কয়েকটি ছিদ্র করি যেন এর ভিতরে বাতাস প্রবেশ করতে পারে এতে করে অতিরিক্ত ভেজা অবস্থাটি শুকিয়ে আসবে।
  • দুই তিন দিন পর গর্তের ছিদ্রগুলো মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেই।
  • আবার যদি দেখা যায় কম্পোস্ট গাঁদাটির ভিতর অতিরিক্ত শুকিয়ে গেছে তখন স্তূপের ভিতর ছিদ্র করে এবং পানি বা গোচেনা প্রবেশ করায়।
  • দ্রুত পছন্দের জন্য গাদাটি একমাস পর প্রথমবার এবং দুই মাস পর দ্বিতীয়বার কুদাল দিয়ে গাধার স্তরগুলো উলটপালট করে দেই। এ সময় কম পচা আবর্জনা গুলো গাদার মাঝখানে রেখে দিই।
  •  
  • তিন মাস পর উপকরণগুলো কালো রং ধারণ করে কম্পোস্ট সারে পরিণত হয়েছে। এগুলোকে হাত দিয়ে চাপ দিলে সহজে গুড়া হয়ে যাবে এভাবেই কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়।

কম্পোস্ট সার কে সবুজ সার ও বলা হয়

কম্পোস্ট সারকে সবুজ সার ও বলা হয়।কৃষি ক্ষেত্রে সবুজ সার তৈরি করা হয় ফসলের উপড়ে ফেলা ও পরিত্যক্ত অংশ থেকে। এজন্য প্রথমে ফসলের পরিত্যক্ত অংশগুলো জমিতে শুকিয়ে নেই, যাতে করে তা মাটির সংশোধন হিসেবে কাজ করে। সবুজ সারের প্রধান উপকরণ হচ্ছে সবুজ পাতা, উপড়ে ফেলা ফসলের অংশ, আগাছা,কচি সরিষার গাছ, মাস ডালের গাছ ধইঞ্চা গাছ ইত্যাদি।


বর্ষা মৌসুমে জমিতে পানি জমে থাকা অবস্থায় সবুজ ঘাস, লতাপাত্‌ ফসলের উপড়ে ফেলা অংশ ধইঞ্চা গাছ মাস ডাল গাছ জমিতে ফেলতে হবে। ১০-১২ দিন পর দুই তিনটি চাষ দিলে গাছ সম্পূর্ণভাবে পচে মাটির সাথে মিশিয়ে যাবে এবং ফসল উৎপাদনে উপযোগী মাটি তৈরি হবে। সবুজ সার ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বহুলাংশে কমে যাবে। 

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টন ধইঞ্চা গাছ উৎপাদন করে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করে, যা 200 থেকে 260 কেজি ইউরিয়া সারের সমান। সবুজ সার মূলত মাটিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে, মাটিতে জৈব পদার্থের যোগান দেয়। ভূমির আচ্ছাদন ও ভূমিক্ষয় রোধ করে। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চমাত্রার ফসল ফলানো সম্ভব হয়।

কম্পোস্ট সারের আর একটি জাতের নাম ভার্মি কম্পোস্ট

কম্পোস্ট সারের আরেকটি নাম হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট। ভার্মি কম্পোস্ট গবরের সাথে কেঁচো মিশিয়ে তৈরি করা হয় এর সার মাটির উর্বরতা শক্তিকে আরো বৃদ্ধি করে। ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী করার নিয়ম হচ্ছে-
কম্পোস্ট-সারের-আর-একটি-নাম-ভার্মিকম্পোস্ট
  • প্রথমে ২ মিটার লম্বা এক মিটার চওড়া ও এক মিটার গভীরতা বিশিষ্ট একটি গর্ত তৈরি করি। গর্তের উপরে টিন অথবা খড়ের চাল দেই । গর্তের মধ্যে পচা ও বাসি গবর ঢেলে গর্তটি ভরাট করি।
  • এখন গোবর ভরা গর্তে ২০০ থেকে ৩০০ টি কেঁচো ছেড়ে দেই। এই কেচোগুলো গোবর সার মলত্যাগ করবে। এই মল মুলত ভার্মি কম্পোস্ট সার। এই সার তৈরি নির্ভর করে কেঁচোর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। কেঁচোর সংখ্যা যত বেশি হবে তত দ্রুত সার তৈরি হবে।
  • ভার্মি কম্পোস্ট দেখতে অনেকটা চায়ের গুড়ার মতো। সার তৈরির পর সাবধানে চালনে দিয়ে চালতে হবে। যাতে করে কেঁচোগুলো মারা না যায়। এই কেচোগুলো দিয়ে পুনরায় কম্পোস্ট সার তৈরির কাজে ব্যবহার করা যাবে।
শাক সবজি সহ সকল প্রকার ফসলের ক্ষেত্রে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা যায়। এ সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়, এবং পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ে,  মাটির বিষাক্ততা দূরীভূত করে, ফলে গাছ দ্রুত বাড়ে এবং পুষ্টিময় হয়। কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে ফসল ফলনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে করে কৃষক লাভবান হয়। উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষ সুস্থ্য সুন্দর জীবন যাপন করে।

সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

প্রশ্নঃ কম্পোস্ট কি
উত্তরঃ কম্পোস্ট এক প্রকার জৈব সার।

প্রশ্নঃ কম্পোস্ট সার কত প্রকার ও কি কি
উত্তরঃ কম্পোস্ট চার প্রকার। ১.খামার সার। ২.সবুজ সার। ৩. কম্পোস্ট ও ৪. ভার্মি কম্পোস্ট সার।

প্রশ্নঃ কম্পোস্ট গাদা তৈরির জন্য কয়টি গর্ত প্রয়োজন হয়
উত্তরঃ কম্পোস্ট গাদা তৈরীর জন্য দুটি গর্তের প্রয়োজন হয়।

প্রশ্নঃ কম্পোস্ট গাদা কয়টি পদ্ধতিতে করা যায়
উত্তরঃ কম্পোস্ট গাদা দুইটি পদ্ধতিতে করা যায। ১. গর্ত পদ্ধতি ২ .স্তব পদ্ধতি।

প্রশ্নঃ কম্পোস্ট গাদায় কি পরিমানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়
উত্তরঃ ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০গ্রাম টিএসপি দিতে হয়।

প্রশ্নঃ ভার্মি কম্পোস্ট সারের উপকরণ গুলো কি কি
উত্তরঃ কাঁচা গোবর ও পরিমান মত কেঁচো।

প্রশ্নঃ সবুজ সার তৈরিতে কি কি উপকরণ লাগে
উত্তরঃ সবুজ পাতা- লতা, উপড়ে ফেলা ফসলের অংশ, মস ও ডাল জাতীয় গাছ, ধইঞ্চা গাছ ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় এমন এলাকায় কোন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়
উত্তরঃ স্তুপ পদ্ধতিতে।

প্রশ্নঃ হিউমাস কি
উত্তরঃ মাটিতে উপস্থিতি জৈব পদার্থকে হিউমাস বলে।

প্রশ্নঃ মাটির জীবন কাকে বলা হয়
উত্তরঃ জৈব পদার্থকে মাটির জীবন বলা হয়।

কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা নিয়ে লেখকের মন্তব্য

কম্পোস্ট সারের ১০টি উপকারিতা ও ব্যবহার নিয়ে আমরা নিশ্চিত বলতে পারি, ফসল উৎপাদনে সব থেকে উন্নত জাতের সার হলো কম্পোস্ট সার। কম্পোস্ট সার ব্যবহারে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই। মানুষ অনায়াসে ফসলে ব্যবহার করতে পারে।কম্পোস্ট সার ব্যবহারে ফসল ফলে দ্বিগুন হারে। মাটির পুস্টি দুটোই ভালো থাকে।
 
এই সার ব্যবহারে ফসলে পোকা মাকড়ের আক্রমন কম হয়, ফলে ফসল থাকে সুরক্ষিত। কম্পোস্ট সার ব্যবহারে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুকি থাকে না। এতক্ষনে নিশ্চিত আমি আপনাদের  কম্পোস্ট সার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে সক্ষম হয়েছি। আমার লেখা আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে,তবে লাইক কমেন্ট দিয়ে  উৎসাহিত করবেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url