ডালিম খাওয়ার উপকারিতা ও ১০ টি আশ্চার্যজনক পুস্টিগুন
ডালিম খাওয়ার উপকারিতা কি, জানতে ইচ্ছে করছে। অবাক হবার কিছুই নেই। তাহলে আসুন জেনে নেই। লাল টুকটুকে দানাযুক্ত ফল ডালিম, ছোট বড় সবার পছন্দের। এমন কেউ নেই যে ডালিম খেতে ভালো বাসে না। ডালিম দেখতে সুন্দর আর ভিতরের দানাগুলো বেশ চমৎকার।
আমরা তো সবাই ডালিম খাই, কিন্তু আমরা কি জানি ডালিমের মাঝে কি পুস্টিগুন আছে। আপনি যদি জানতে চান তাহলে আমার লেখা আর্টিকেলের সঙ্গে থাকুন। আজ আমি আপনাদের ডালিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব।
পেইজ সূচীপত্রঃ ডালিমের আশ্চার্যজনক পুস্টিগুন
- ডালিম খাওয়ার উপকারিতা কি
- ত্বকের সুস্থ্যতায় ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
- ডালিম ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে
- ক্ষতস্থানে ডলিমের রস ব্যবহা্র করবেন কিভাবে
- আমাশয় রোগের জন্য ডালিমের খোসার ব্যবহার
- ডালিম ডায়াবেটিস রোগের প্রতিরোধক
- গর্ভবতি মায়ের ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
- ডালিম খাওয়ার অপকারিতা
- ডালিম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
- ডালিম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে লেখকের মন্তব্য
ডালিম খাওয়ার উপকারিতা কি
ডালিম খাওয়ার উপকারিতা ও এর পুস্টিগুনের কথা জানলে অবাক হবেন। ডালিম দেখতে খুবই সুন্দর একটি ফল, ভিতরের দানাগুলো দেখতে আরও চমৎকার। ফলের দানাগুলো দেখলেই নজর কেড়ে নেয়, অনেক খাবারের ইচ্ছে করে। এর যেমনি আকর্শনীয় রঙ আছে, তেমনি স্বাধ সহ আছে পুস্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা।
ডালিম রক্ত বৃদ্ধি করে, অরুচি দূর করে, শক্তি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা বহন করে। তাছাড়া শ্বাসকস্ট, কাশি, বাত সহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি, যা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ডালিমে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট নামক পুস্টিগুন, যা গ্রীন টি থেকে প্রায় তিনগুন বেশি।
আরো পড়ুনঃ ওজন বাড়ানোর যাদুকরী উপায়
আরও আছে অ্যান্থোসিয়ানিন উপাদান, যা ক্ষতিকারক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে, আর শরীরের কোষগুলোকে স্বুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া জন্ডিজ, বুকের ব্যাথা সহ হৃদরোগ সারাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। আপনি জানলে অবাক হবেন, ডালিম আমাদের শরীরের মাংশ পেশিতে দ্রত অক্সিজেন পৌছে দেয়।
প্রতিদিন তেল ও চর্বি জাতীয় খাবারের ফলে আমাদের ধমনিগুলোতে চর্বি জমে সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে বুকে ব্যাথা অনুভব হয়।একগ্লাস ডালিমের জুসই পারে ধবনির জমে থাকা চর্বিকে পরিস্কার করতে। তাছাড়া ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিওক্সিডেন্ট, যা রক্তের কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ডালিম রাখেন, তাহলে কখনই হৃদরোগের ঝুকি থাকবে না।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ডালিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের
খাবারের তালিকায় ডালিম রাখলে আপনার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে। গবেষকরা বলেছেন,
যারা প্রতিদিন ডালিম খায় তাদের স্মৃতিশক্তি থাকে প্রখর।
ত্বকের সুস্থ্যতায় ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
ত্বকের সুস্থ্যতায় ডালিম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। ডালিমে আছে পোমেগ্র্যানেট অয়েল, যা আপনার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে এবং ত্বকের ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণকে দূর করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া ডালিমে আছে ফলিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও ট্যানিন। যা আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষ উপযোগী।
আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তাহলে আপনি ডালিম বীজের তেল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা ডালিম বীজের তেল তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই উপকারি। তাছাড়া আপনার ত্বককে পরিস্কার ও মসৃণ রাখতে নিয়মিত স্ক্রাব করা প্রয়োজন। ত্বকের টোনার হিসেবে দালিমের রস অত্যন্ত কার্যকরি। ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন যা আপনার শরীরের রক্ত সল্পতা দূর করতে সাহায্য করবে।
আপনি যদি আপনার ত্বক কে উজ্জল ও মসৃণ করতে চান তাহলে এই টিপস টি ব্যবহার করতে পারেন। সম পরিমান ডালিমের রসের সাথে মধু মিশিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত আপনার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন আপনার ত্বক দেখবেন আপনার ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। একটি দুটি নয়, ডালিম বহুগুনে ভরপুর একটি ফল।
আর পড়ুনঃ চুলের যত্নে অলিভ অয়েলের ম্যাজিক
ত্বকের একটি স্তর ডার্মিস যা ফাইবার বা আঁশ দিয়ে তৈরি রাখে কোলাজেন, যার জন্য দরকার প্রোটিন ও ভিটামিন সি। ডালিম কোলাজেন এবং ফাইবারকে ঠিক রাখে এন্টি এজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, অকালে বুড়ি হয়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে। ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আপনার ত্বকের জ্বালা পোড়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
ডালিমের জুস ত্বকের যত্নে দারুন উপাদান। এর ক্ষুদ্র আকারের মলিকিউল গঠন ত্বকের গভীরে পৌঁছে তাকে হাইড্রেট করে। এই রসে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং থাইটোকেমিক্যাল আছে। ডালিম ত্বকে প্রদাহ প্রশমিত করে।এর সাথে ফল্টি ত্বকের পুনরুজ্জীবন ঘটায় ফলে বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না।তাছাড়া আপনি ডালিমের হালকা মিষ্টি নরম বীচিগুলো থেতো করে আপনার ত্বকে লাগাতে পারেন। ত্বকের উজ্জলতায় এত দ্রুত কাজ করবে।
ডালিম ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে
ডালিম ক্যান্সার নামক ভয়াবহ রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ক্যানসার একটি মারাত্বক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত রোগির বেচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে। এ রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য ডালিম প্রতিসেধক হিসেবে কাজ করে। যারা নিয়মিত ডালিম খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ডালিমে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা ক্যান্সার সেল তৈরি ও বেড়ে উঠাকে বাধা প্রদান করে ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে ডালিম বেশ কার্যকর। আমাদের উচিত ,দৈনিক খাবারের তালিকায় ডালিম রাখা খুবই প্রয়োজন।
ক্ষতস্থানে ডলিমের রস ব্যবহা্র করবেন কিভাবে
ডালিম খাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতস্থানে ডালিমের রস বেশ উপকারী। দূর্ঘটনায় আপনার যদি কোন স্থানে কেটে যায় বা ছিড়ে যায় কিম্বা থেতলে গিয়ে রক্তপাত হয়, তাহলে ক্ষতস্থানে ডালিমের রস, ডালিমের ফুল,কিম্বা ডালিমের পাতা পেস্ট করে লাগিয়ে দিলে আতি দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হবে। রক্তপাত বন্ধ কত্রে ডালিম বেশ উপকারী।
আপনার প্রতিবেশির মধ্যে এমন লোক ও আছে যাদের কোন আঘাত ছাড়ায় হঠাত নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। শিশুদের মাঝে এমন অবস্থা বেশি লক্ষ করা যায়। কোন আঘাত বা পলিপ ছাড়া এমন রক্ত ঝরতে দেখা যায়। এমন সময় ডালিমের পাতা কুচিয়ে রস বের করে সেই রস নিঃশ্বাসের সঙ্গে নিলে পারে নাকের রক্ত পড়া তড়িৎ বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাশয় রোগের জন্য ডালিমের খোসার ব্যবহার
ডালিমের কোন অংশ ফেলে দিবার নয়। প্রতিটা অংশে ওষুধিগুণ রয়েছে। ক্ষতস্থানে দিলে
ব্যথা কমে যায় কেটে বা ছেড়ে দেওয়া স্থানে রক্ত পড়লে ডালিমের পাতার পেস্ট
লাগিয়ে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ডালিমের খোসা সেদ্ধ করে আমাশয় রোগে
খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। এজন্য আপনারা ডালিম খাওয়ার পর খোসা শুকিয়ে
সংরক্ষণ করতে পারেন।
আপনাদের মাঝে যে সকল শিশুদের পেট বড় হওয়া সহ বিভিন্ন রোগ আছে, তাদের ডালিমের
শিকড় শুকিয়ে গুড়া করে যদি খাওয়ানো যায় , তবে শিশুদের পেট বড়
হওয়া থেকে রেহাই পাবে। এছাড়া ডালিম গাছের শিকড় কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহার
যায়। ডালিম শুধু ফল হিসেবে খাওয়া যায় তা না, বিভিন্ন জটিল রোগের ঔষধ
হিসেবে ডালিমের পাতা ছাল, শিকড় এমন কি ডালিমের খোসাও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার
করা যায় তাই বাড়ির প্রতিটি সদস্যকে ডালিম খাওয়া উচিত।
ডালিম ডায়াবেটিস রোগের প্রতিরোধক
ডালিমকে ডায়াবেটিস রোগের প্রতিরোধক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। ডালিমের বীজে
প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকারক
দিক থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস,
হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দির্ঘস্থায়ী রোগও প্রতিরোধ করতে পারে।
তবে ডায়াবেটিস রোগীকে প্রচুর পরিমাণে ডালিমের রস খাওয়া নিরাপদ নয়। কেননা ডালিমের রসে আছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, যা রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। এটি পরিমিত খাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
গর্ভবতি মায়ের ডালিম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের ডালিম খাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে। একজন গর্ভবতী মায়ের এ সময়টা বড় চ্যলেঞ্জের সময়। এই সময় তাদের অনেক পুস্টির প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডালিম একটি বড় সংযোজন। ডালিমে আছে ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন, পটাশিয়াম, ফাইবার, ফলিক এ্যাসিড ও ভিটামিন বি সহ বিভিন্ন রকমের গুরুত্বপুর্ন খনিজ পদার্থে পরিপুর্ণ।
এই জন্য ডালিম কে সুপারফুট বলা হয়।যেহেতু ডালিমকে সুপারফুট বলা হয়, সেহেতু গর্ভবতী মায়ের ডালিম খাওয়া খুবই প্রয়োজন।গর্ভবতী মায়ের জন্য ডালিম অনেক পুস্টি সরবরাহ করে। গর্ভাবস্থায় ডালিম খাওয়ার ফলে গর্ভবতি মায়ের ত্বক সুস্থ্য ও দারুন উজ্জ্বল থাকে। গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ফল গুলোর মধ্যে ডালিম অন্যতম, কেননা এটা ভারি মানের পুস্টি সরবরাহ করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা জানলে চমকে যাবেন
তাই ডাক্তার ও পেশাদার স্বাস্থ্যবীদরা গর্ভবটি মায়েদের ডালিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডালিমে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও ফাইটোকেমিক্যাল, যা গর্ভবতী মায়ের হার্টকে সুস্থ্য রাখে। ডালিমে আছে প্রটিন, আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি এবং ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ও ক্যালশিয়াম। যা গর্ভবতী মায়ের সুস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
তাছাড়া ডালিমের রস ও ডালিমের বীজ গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী।গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্তায় ডালিম খাওয়ায় কোন ঝুকি নাই। ডালিম খাওয়ার উপকারিতা ও পুস্টিগুন আছে নিচে তা আলোচনা করা হলো-
১. হজমে সাহায্য করেঃ ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা গর্ভবতী মায়ের খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং মল ত্যাগের কার্যকারিতে নিয়মিত করে।
২. ক্র্যাম্প প্রতিরোধ করেঃ ডালিমে আছে অনেক পটাশিয়াম, যা একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের ব্যাথা কমতে সাহায্য করে।
৩. মস্তিস্কের বিকাশে সহায়কঃ ডালিমে আছে ফোলেট, যা শিশুর মস্তিস্কের বিকাশ ঘটায়। শিশুর সুস্থ্য মস্তিস্ক বৃদ্ধিতে ডালিম অত্যন্ত কার্যকর। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের জন্য প্রতিদিনের প্রস্তাবিত ফলেটের প্রায় ১০%ডালিম থেকে পাওয়া যায়।
৪. রক্ত শুন্যতা পুরুণ করেঃ ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন ও ভিটামিন সি, যা শরীরের রক্ত সল্পতা এবং গর্ভ সংক্রান্ত দূর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ডালিমে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। পেট ফোলা ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
৬. গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্তায় বিভিন্ন ভাবে ডালিম খেতে পারেন।
- সালাদ বা শাকসব্জিতে গার্নিশ ব্যবহার করতে পারেন।
- ইয়োগার্ট বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- ডালিমের রস স্মুদির উওপাদান হিসেবে খেতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url