কালোকেশী গাছের উপকারিতা ও ১০ টি আশ্চর্য ঔষধি গুণ
কালকে এসে গাছের উপকারিতা ও দশটি আশ্চর্য , ঔষধি গুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। এটি একটি ঘাস জাতীয় গাছ। এই গাছকে কেশরাজ বলা হয়।
এই গাছটি অত্যন্ত উপকারী ও ঔষধি গুন সম্পূর্ণ গাছ। আজ আমি আপনাদের কালোকেশি গাছের উপকারিতা ও ১০টি ঔষধি গুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চলুন তাহলে কালোকেশী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কালকেশি গাছের উপকারিতা
- কালোকেশী গাছের উপকারিতা
- চুলের যত্নে কালোকেশী
- ক্ষতস্থানে রক্ত ঝরা বন্ধ করে
- শরীরের ফুসকুড়ি ও পাচড়া নিরাময় করে
- কালোকেশী মাথা ঠান্ডা করে
- মাথা ব্যথা দূর করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সাহায্য করে
- নিরাপদ কীটনাশক
- কালোকেশী গাছের উপকারিতা নিয়ে শেষ কথা
কালোকেশী গাছের উপকারিতা
কালোকেশী গাছের উপকারিতা অনেক। এটি একটি ওষুধে ঘাস ফুলের গাছ। কালকেশী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর শাখা প্রশাখা গুলো মাটিতে ছড়ায় থাকে। এ গাছের দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এর পাতাগুলো গাড়ো সবুজ রঙের হয়ে থাকে। পাতা সাধারনত ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। কালোকেশী পাতার গোড়া থেকে শাখা প্রশাখা বের হয়।
এই প্রসাখার শেষ প্রান্তে দুটি থেকে তিনটি ফুল ফোটে। ফুলগুলো সাদা রঙের হয়ে থাকে। এই ফুল থেকে ফল হয়। এবং ফলের মাঝে অনেকগুলো বিজ থাকে।এই বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হয়। কালোকেশী গাছ থেকে এক ধরনের কালো রং বের হয়। যা আমাদের চুলকে আরো কালো করতে সাহায্য করে। কালোকেশী শুধু চুলের উজ্জ্বলতার জন্য ব্যবহার করা হয় না। বরং কালোকেশী গাছ ঔষধি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে মুলতানি মাটির ব্যবহার
এর পাতা শরীরের ফুসকুড়ি ও পাঁচড়া নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কালোকেশী গাছকে বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আপনাদের যদি কারো শরীরে ক্ষত হয়ে থাকে তাহলে কালোকেশী গাছের পাতা বেটে ক্ষতস্থানে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ক্ষতস্থানের ঘা ভালো করতে সাহায্য করে। বাতজ্বর হাড়ের ব্যথা ইত্যাদি রোগের মহা ঔষধ হিসেবে পরিচিত। কালোকেশী গাছকে কেশরাজ বলা হয়।
চুলের যত্নে কালকেশী
কালকেশী বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকা গুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত বনে জঙ্গলে পুকুর ধারে রাস্তার পাশে জন্মাতে দেখা যায়। এটি একটি লতা জাতীয় গাছ। কালোকেশী গাছ ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর শাখা- প্রশাখা গুলো মাটির দিকে ছড়ানো থাকে। বহুকাল ধরে চুলের যত্নে এই গুল্ম জাতীয় গাছটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
কালো কেশি গাছ চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহারে আপনার চুল সুন্দর ও সিল্কী হবে। আপনার চুলকে সুন্দর, রেশমী ও স্বাস্থ্যজ্জল করার জন্য কালোকেশীর বিকল্প নাই। নিয়মিত কালোকেশী ব্যবহার করলে আপনার চুলে অন্য কোন হেয়ার প্যকের প্রয়োজন হবে না। আপনি যদি চুলকে আরো স্বাস্থ্যজ্ল করতে চান তাহলে অলিভ অয়েল চাপ দিন।
ক্ষতস্থানে রক্ত ঝরা বন্ধ করে
ক্ষতস্থানে রক্তঝরা বন্ধ করে কালকেশী। গবেষণায় বলা হয়েছে-যদি মেয়েদের মাসিকের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এই গাছের পাতার রস খেয়ে থাকেন। এই পাতার রস খেলে অনিমিত মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়। আপনার যদি মাসিক জনিত কারণে না পেটে ব্যথা হয় হলে কালোকেশী পাতা রস সেবন করুন। কারণ কালকেশী পাতার রস ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে পুদিনা পাতার ব্যবহার
তাছাড়া আপনার শরীরে যদি কোন স্থানে কেটে যায় এবং রক্ত ঝরতে থাকে, তাহলে রক্ত বন্ধ করতে আপনি কালকেশীর পাতাকে বেছে নিতে পারেন। ক্ষতস্থানে কালকেশী পাতার পেস্ট বানিয়ে লাগাতে পারেন।তাহলে রক্ত ঝরা বন্ধ হয়ে যাবে। বৈজ্ঞানিকগণ এই গাছটিকে ছত্রাক বিরোধী ও অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে প্রমাণিত করেছেন।
শরীরের ফুসকুড়ি ও পাচড়া নিরাময় করে
কালোকেশী মাথা ঠান্ডা করে
মাথা ব্যথা দূর করে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সাহায্য করে
নিরাপদ কীটনাশক
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কর।
- কালকেশীতে এমন একটি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
- এটি লিভার টনিক হিসেবে কাজ করে। লিভারের যে কোন সমস্যার সমাধানে কালোকেশীর বিকল্প নাই।
- নিমঃ ঔষধি গুণসম্পন্ন পাতাগুলোর মধ্যে নিমপাতা একটি। নিম পাতা ব্যবহার বহুকাল ধরে চলে আসছে। নিম পাতা ডায়াবেটিস রোগীরা নেমে পাতার পেস্ট করে ছোট ছোট ট্যাবলেট বানিয়ে শুকিয়ে রাখেন, এবং সকালে বিকাল খেয়ে থাকেন। নিম পাতার অনেক কার্যকরী গুন রয়েছে। নিম পাতা ব্যবহারের ফলে চিকেন পক্স, চামড়ার অ্যালার্জির সমস্যায় নিমের পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- তাছাড়া পোকা মাকড়ের কামড়ে ক্ষত হলে, সেখানে নিম পাতা আর হলুদের রস একসাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে ব্যাথা ভালো হয়। তাছাড়া দাতের ব্যাথায় নিম পাতা অনেক কার্যকরি। নিমপাতা কৃমি রোগের মহাঔষধ। আপনাদের পরিবারের কারো যদি কৃমি জনিত সমস্যা থাকে, তাহলে নিমপাতা রস এক চামচ পরিমাণে খালি পেটে খেলে কৃমির রোগ ভালো হয়ে যাবে।
- তুলসীঃ তুলসী আমাদের কাছে একটি অনেক পরিচিত নাম। গ্রামের অনেক বাড়িতে তুলসী গাছ দেখা যায়। তুলসী গাছ চেনে না এমন মানুষ কম আছে। হিন্দু সম্প্রদাইয়ের লোকেরা তুলসী গাছকে পূজার প্রধান উপকরণ হিসেবে গন্য করে। পূজার উপকরণ ছাড়াও তুলসী পাতা অনেক ঔষধি গুনে ভরপুর।
- ঠান্ডা ধ্বনি তো কারণে আমরা তুলসী পাতা খেয়ে থেকে। অনেকে চায়ের সাথে তুলসী পাতা খেয়ে থাকে। অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেন যে তুলসী পাতা ভিজে ঘি দিয়ে নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়তে থাকে।
- পাথরকুচিঃ পাথরকুচি আর একটি ওষুধী সম্পন্ন গাছ। গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে যে পাথরকুচির পাতা কিডনি ভাঙতে সাহায্য করে। গবেষকরা তাদের ঘরে বলেছেন পাথরকুচি পাতা জর, পেট ফাঁপার মতো সমস্যায় খেলে পারে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া শরীরে এলার্জি জনিত কারণে ত্বকের সমস্যা হতে দেখা যায়।
- দুর্বা ঘাসঃ আমরা অনেকেই দুর্বা ঘাস চিনি। কিন্তু অনেকেই এর উপকার সম্পর্কে জানিনা। দুর্ভাগ হাঁসকে মাঠে-ঘাটে রাস্তার পাশে এই দুর্বাঘাস অবাদে জন্মাতে দেখা যায়। শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হলে, কিংবা কেটে গেলে, চর্ম রোগে এর ঘাসের রস অনেক উপকারী। কোথাও কেটে গেলে যদি রক্ত বন্ধ না হয়, দুর্বা ঘাসের রস লাগালে তাৎক্ষণিক রক্ত বন্ধ হয়ে যায়।
- দুর্বল ঘাসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আপনাদের কারো শরীরে যদি রক্তস্বল্পতা থাকে। নিয়মিত দুর্বা ঘাসের রস ২ চামচ পরিমাণ করে খেলে অল্প দিনে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। কারো যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। তাহলে দূর্বা ঘাসে রস নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে যায়।
- স্বর্ণলতাঃ স্বর্ণলতাকে আমরা সবাই চিনি। বোন বাবারে বাড়ির আশেপাশে গাছের উপরে এ গাছ হতে দেখা যায়। এই গাছের কোন পাতা ফুল ফল কিছুই নেই। স্বর্ণলতা লতা জাতীয় উদ্ভিদ। ওষুধ গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ গুলোর মধ্যে স্বর্ণলতা একটি। জন্ডিস নিরাময় তলপেটের ব্যথা কমানো, ব্যথা উপশমে স্বর্ণলতা বিশেষভাবে কার্যকরী।
- বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে স্বর্ণলতা সেদ্ধ করে পানি খেলে পিত্ত নাশক ও কৃমির দমনে সহায়তা করে। স্বর্ণলতা ব্যাকটেরিয়া দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই মনে করেন স্বর্ণলতার পাতার রস অনেক সময় গর্ভপাত বা প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। চুলের যত্নে স্বর্ণলতা কে হেয়ার প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। স্বর্ণলতা ব্যবহারের ফলে আপনার চুল লতার মতই লম্বা হবে বলে মনে করা হয়। তাছাড়া স্বর্ণলতা খুশি দমনে বিশেষ উপকা্রি।
- থানকুনি পাতাঃ থানকুনি একটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ হলেও ঔষধি গুণে ভরপুর। থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এ পাতার মধ্যে অনেক উপকারিতা আছে। থানকুনি পাতার মাঝে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা আমাদের শরীরের মূত্রনালীর সংক্রমন দূর করতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতায় মেডেকাসসাইড উপাদান আছে যা আমাদের ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করতে সাহায্য করে।
- তাছাড়াও থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে এমাইনো এসিড, বিটাকে্রোটিন, ফ্যাটি এসিড ও ফাইটোকেমিক্যাল বিদ্যমান থাকায় আমাদের ত্বককে কোমল মসৃণ ও নরম করে। থানকুনি পাতা আমাদের হজম সমস্যা থেকে মুক্তি করে। তাছাড়া গলা ব্যথা ও কাশি নিরাময়ের থানকুনি পাতার ঝুড়ি নেই। তাছাড়া থানকুনি পাতা আমাশা রোগের জন্য বিশেষ কার্যকরী।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url