১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন? তাহলে
আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। বাঙালি জাতি দখলদার গোষ্ঠী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে
৯মাস রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে এই দিনে বিজয় অর্জন করে। ১৬ই
ডিসেম্বর দিনটি বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দ এবং গৌরবের।
তাই.১৬ ই ডিসেম্বর এলে সমগ্র বাংলাদেশে লাল সবুজের পতাকায় সেজে ওঠে। ১৬ই
ডিসেম্বরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ
সারাদেশের স্মৃতিসৌধ গুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব
অঞ্চলেই বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের
মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়।
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে চলুন জেনে আসি। আপনারা হয়তো
অনেকেই জানেন না বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস কি? আজ আমি আপনাকে বলে দিব ১৬
ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। ১৬ই ডিসেম্বর
জাতির জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরব উজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালে
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করে স্বাধীন সার্বভৌম এই বাংলাদেশ।
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস হচ্ছে বাঙ্গালী জাতির আজন্ম লালিত
স্বপ্ন। পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে দাস হিসেবে ব্যবহার করত। দাসত্বের শৃঙ্খল
থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য পরাধীন বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সোচ্চার
হয়েছিলেন। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের
মহান বিজয় দিবস।
বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের পটভূমি
১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ রাত্রিতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত বাঙালি জাতির
উপর আক্রমণ চালায়। তাদের অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে পুরো বাঙালি জাতি
ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার ডাক দেন। এতে ছাত্র-জনতা, পুলিশ, ইপিআর ও বেঙ্গল
রেজিমেন্টের সেনা সদস্যরা সাহসিকতার সাথে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
বিনা প্রতিরোধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের বাঙালিরা ছাড় দেননি। দেশের জন্য যুদ্ধ
করতে গিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ঋণ কখনো শোধ করা যাবে
না। বাঙালি জাতি চিরদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সূর্যসন্তান হিসেবে স্মরণ করবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে সর্বস্তরের বাঙালিরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ
করে।
জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
তাই এই যুদ্ধ কে বলা হয় গণযুদ্ধ বা জন যুদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মূল
নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী
ছাত্র, পেশাজীবি, নারী সহ সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়ে।
জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে শত্রু মুক্ত করে। ফলে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন
সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় মুক্তিবাহিনী প্রধান
সেনাপতি ছিলেন আতাউল গনি ওসমানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অধিনায়ক।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পুরো বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।
৩রা ডিসেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্র বাহিনী যুক্ত হয় এবং
যৌথভাবে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরিচালনা করে। যৌথ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে
পরাজিত হয় পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার
পাকিস্তানের সৈন্য নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জেনারেল বাঙ্গালীদের
কাছে আত্মসমর্পণ করে।
পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির বিজয় সূচিত হয়। এ বিজয়
বাঙালি জাতির গৌরব ও অহংকারের বিজয়। এই বিজয়কে লক্ষ্য রেখে বাঙালি জাতি
প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস পালন করে
থকে। এ বিজয়ের কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
বিজয় অর্জনে নারীর ভূমিকা
বিজয় অর্জনে নারীর ভূমিকা ছিল অসীম। সুদীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ চলাকালে নারীরা
সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। নারীরা অংশগ্রহন করে কখনো সরাসরি যুদ্ধ ক্ষেত্রে আবার
কখনো যুদ্ধক্ষেত্রের আড়ালে। মুক্তিযুদ্ধের সাহস যুগিয়েছেন এবং প্রেরণা দিয়েছেন
এমন অসংখ্য নারী। অজানা বহু আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বদা সেবা সশ্রূষা করেছেন বহু
নারী।
নারীরা চরম দুঃসময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করতে নিজেদের ঘরে
আশ্রয় দিতে কুন্ঠাবোধ করেন নি। বাঙ্গালীদের এ বিজয় ছিনিয়ে আনতে বহু নারীর
সম্ভ্রম এবং প্রাণ দিতে হয়েছে। পুরুষেরা কখনো একা এ বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি।
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ছিনিয়ে আনতে নারীদের ভূমিকা কখনো
অস্বীকার করা যাবে না।
তাই বলা হয় কখনো একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, কামনা করেছে প্রেরণা
দিয়েছে বিজয়ী লক্ষী নারী।
১৬ই ডিসেম্বর পালিত হয় এক ঐতিহাসিক দিন
১৬ই ডিসেম্বর পালিত হয় এক ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটির কথা বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে
চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই বিশেষ দিনটি প্রতিবছর দেশের সর্বত্র
রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। ১৬ই ডিসেম্বর দিনটি বিজয় দিবস হিসেবে বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২ সালে ২২শে জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে ১৬ই ডিসেম্বর কে
বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
এই দিনটিতে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। সুদীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করার পর ১৯৭১
সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে পাকিস্থানি বাহিনীর প্রায় ৯১ হাজার ৬৩৪ জন সদস্য
ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানিদের এই আত্মসমপর্নের মধ্য
দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা
দখল করে।
ঐতিহাসিক তোপধ্বনির মাধ্যমে এ দিবস সূচিত হয়
ঐতিহাসিক তোপধ্বনির মাধ্যমে এবং এ দিবস পালিত হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে এ দিবসটি
যথাযথ ভাব গাম্ভীর্যের মাধ্যমে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ৩১ বার
তোপধ্বনির মাধ্যমে ১৬ই ডিসেম্বরে দিবসটির সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ১৬ই
ডিসেম্বর অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয়। এই অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী এবং
সেনা বাহীনির সদস্যরা যোগ দেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম
গ্রহণ করেন। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ সমবেত হয়।বাংলাদেশ
স্বাধীনতার যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকার
সাভারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সকল রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীরা জাতীয়
স্মৃতিসৌধে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমপর্ণ
পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমপর্ণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য উদয়
হয়। উনিশ শত ৭১ সালে সুদীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তান বাহিনী
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। ময়দানে
ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নেয়াজি পাকিস্তানিদের
পক্ষে আত্মসমপর্ণের দলিলে স্বাক্ষর করেন।
সেই সময় যৌথ বাহিনীর প্রধান ছিলেন জেনারেল জগদীশ জগজিৎ সিং অরোরা।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর উপ সর্বাধিনায়ক আব্দুল
করিম খন্দকার উপস্থিত ছিলেন তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী কে
উপস্থিত রাখা হয়নি। আত্মসমর্পণকারী দলিলে শর্ত ছিল নিম্নরূপ-
বাংলাদেশ ভারত যৌথ বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে
পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডো সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
শর্ত দেওয়া ছিল পাকিস্তানের সেনা ও বিমান বাহিনী সহ সকল সরকারি আধা সরকারি
সামরিক বেসামরিক সকল বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করত হবে।
এই বাহিনী গুলোর মধ্যে যে যেখানে অবস্থান করছেন তারা সেখান থেকেই জেনারেল
জগজিৎ সিং অরোরার কাছে এবং তার নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমপরণ এবং
আত্মসমর্পণ করবে।
এই দলিলে স্বাক্ষরিত হওয়ার সাথে সাথেই পাকিস্তানের সকল সামরিক কমান্ড
লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন থাকবে।
পাকিস্তানিরা জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কোন নির্দেশ অমান্য করলে
তা আত্মসমপরণ এর নির্দেশ লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে। সেই ক্ষেত্রে যুদ্ধের
স্বীকৃতি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আত্মসমর্পণের শর্তাবলি নিয়ে কোন সংশয় দেখা দিলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ
সিং অরোরার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা
কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্ত মর্যাদা ও সম্মান দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন পাকিস্তানের আত্মসমর্পণকারী সামরিক ও আধা সামরিক ব্যক্তিদের
নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য অঙ্গীকার প্রকাশ করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীনে পাকিস্তানি বাহিনীগুলোর মাধ্যমে
বিদেশী নাগরিক সংখ্যালঘু ও জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানী
ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেয়ার কথা অঙ্গীকার করেন।
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নয় মাস যুদ্ধ চলতে থাকার পর যুদ্ধের
সমাপ্তি ঘটে।পরবর্তিকালে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাস্ট্রের সৃস্টি হয়।
জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত সকল দেশ বাংলাদেশেকে স্বাধীণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তখন
থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সহ জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত সকল দেশগুলো বাংলাদেশকে
স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদযাপন
করে।
অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করার ফলে, বাংলাদেশ
নামক রাষ্ট্রে স্বাধীন হিসেবে বসবাস করতে সক্ষম হয়েছে। বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে
তারা শুধু বাঙালী জাতি নয় বরং তারা হল বীরের জাতি। এ জাতি পরাধিনতার শিকলে
বন্দি থাকতে চায় না। ফলে তারা যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে
এনেছে।
বিজয় দিবস উদযাপন
বিজয় দিবস উদযাপন করা হয় ১৯৭২ সাল থেকে ১৬ই ডিসেম্বরে। এই বিজয় দিবস প্রতি বছর
রাষ্ট্রিয়ভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ বাঙালি জাতির জন্য একটি
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। গল্প, গান, কবিতা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিবন্ধন চলচ্চিত্র এবং
গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে বিজয় দিবসের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। এই দিন কে কেন্দ্র
করে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের
আয়োজন করে।
এছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা শহর, নগর, বন্দর সকল স্থানে বিশেষ আলোচনা
অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান
সড়কগুলোতে জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয়
দিবস উপলক্ষে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু ঘটনার পরিবর্তন
বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু ঘটনার পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা অনেকেই তা জানিনা। আসুন
বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু ঘটনার পরিবর্তন আপনাদের সুবিধার্থে নিচে তুলে ধরা হল-
১৯৭১ সালঃ স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
১৯৭২ সালঃ গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান প্রকাশিত হয়।
১৯৭২সাল ১৫ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের মাধ্যমে স্বাধীনতার যুদ্ধে অবদান
রাখার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ খেতাব ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উৎসব করা হয়।
২০১৩ সালেঃ ২৭,১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের
জাতীয় পতাকার লাল এবং সবুজ ব্লক নিয়ে একত্রিত হয়। এভাবে তারা বিশ্বের
বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড করে।
২০২১ সালঃ মহান বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হয়।
ভারতে বিজয় দিবস উদযাপন
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মিত্র বাহিনী দেশ ভারত বিজয় দিবস
উদযাপন করে। বিজয় দিবস হিসেবে দেশের প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর স্মরণ করা হয়। ১৯৭১
সালের বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধে, বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করে ১৬ই
ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের জয়কে
উদযাপন করা হয়।
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল
করে আছে। বাংলার ইতিহাসে বিজয় দিবসের গুরুত্ব অনেক বেশি।১৯৭১ সালে পাকিস্তানী
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আব্দুল্লাহ খান নেয়াজি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ৯৩০০০
সৈন্য নিয়ে যৌথ বাহিনীর কমান্ডার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর কাছে
আত্মসমর্পণ করে।
ডিসেম্বর তারিখে বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ঐদিন ভারতের রাজধানী
নয়াদিল্লী তে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর তিন শাখার প্রধান নেতারা
ইন্ডিয়া গেটের অমর জামান জ্যোতিতে মাল্যদান করেন।
বিজয় দিবস বাংলাদেশ
বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে দেশের সর্বত্র রাষ্ট্রীয় ভাবে করা হয়।
১৯৭২ সালে জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস
হিসেবে উদযাপিত করা হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
সুদীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ারদি
উদ্যানে-
পাকিস্তানী বাহিনীর ৯০ হাজারের অধিক সেনা সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা দখল
করে। ভারত সহ জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত সমগ্র দেশ বাংলাদেশ কে স্বাধীন হিসেবে
স্বীকৃতি স্বরুপ প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় দিবস উদযাপন করে।সর্বপ্রথম ভারত
বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী হল ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে ১৬ই
ডিসেম্বর ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বাংলাদেশের
স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরপূর্তি পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি বার্ষিক
পরিকল্পনা ঘোষনা করেন। সরকার ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ১৬ই
ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধিনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের ঘোষণা দেন।
পরবর্তি কালে তা ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সুবর্ণজয়ন্তী মুলত
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে বুঝায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাধ্যমে
১৬ই ডিসেম্বরের কার্যাদি সমাপ্তি হয়। এই দিনটিকে সামনে রেখে ব্যাপক উদ্যেগ গ্রহন
করা হয়। এই কর্ম সূচীর অংশ হিসেবে ১৫ই ডিসেম্বর তারিখে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ
গোবিন্দ তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেনে এবং বাংলাদেশের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের
প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৬ ও ১৭ই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় মহাবিজয়ের মহানায়ক নামক অনুষ্ঠান।রি অনুষ্ঠানটি
উদযাপিত হয় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজায় ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল ৪ঃ৩০ মিনিটে শেখ
হাসিনা সারা দেশের মানুষ নিয়ে একটি শফত বাক্য পাঠ করেন।
লেখকের মন্তব্য
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৬ই ডিসেম্বর উদযাপনের কারণ পটভূমি সহ
অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি আমার লেখা
আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে আমি আশা করব ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান
বিজয় দিবস সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পেরেছেন।
আমার লেখা আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে এই ধরনের আর্টিকেল পাওয়ার
জন্য নিয়মিত আমার ওয়েবসাইট ফলো করুন। আমি আপনাদের প্রয়োজনে তথ্যসম্বলিত
আর্টিকেল নিয়মিত আপগ্রেড করে থাকি।আ আমার লেখা আর্টিকেল পড়ে যদি আপনি কষ্ট
পেয়ে থাকেন আপনাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এতক্ষণে থাকার জন্য বিশেষভাবে
ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url