শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন? ইতিহাসের মহানায়ক শহীদ তিতুমীরের বিখ্যাত বাশের কেল্লা
শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন? আপনি কি শহীদ তিতুমীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন?
শহীদ তিতুমীর একজন ব্রিটিশ বিরোধী ও বিপ্লবী শাসক ছিলেন। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। তার তৈরি বাঁশের কেল্লার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় বাঁশের কেল্লাতে শহীদ হয়েছিলেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ একজন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সিংহ পুরুষ তিতুমীর
- শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন?
- শহীদ তিতুমীরের শিক্ষা জীবন
- শহীদ তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরি করেছিলেন কেন?
- শহীদ তিতুমীর কেন অমর হয়ে আছেন?
- শহীদ তিতুমীরের সংগ্রামের কারণ কি?
- কত সালে তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন?
- তিতুমীর কেন বাঁশ দিয়ে এই দুর্গ নির্মাণ করেন?
- তিতুমীর কেন বিখ্যাত হয়ে আছেন?
- তিতুমীরের বিদ্রোহ বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে বিবেচনার যৌক্তিকতা
- শহীদ তিতুমীরকে কি কি সম্মাননায় ভূষিত করা হয়?
- সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর
- লেখক এর মন্তব্য
শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন?
শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন? একথা কেবলই এদেশের এডুকেটেড পারসন লোকেরাই জানে। শহীদ তিতুমীর ১৭৮২ সালে ২৭শে জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে সৈয়দ বংশে তার জন্ম হয়। তার পিতার নাম ছিল সৈয়দ হাসান আলী এবং মাতার নাম ছিল সৈয়দা আবিদা রুকাইয়া খাতুন।
আরো পড়ুনঃ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদদৌলার পতনের কারণ
ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে যে কয়জন বাংলায় আগমন করেন তাদের মধ্যে সৈয়দ শাহ হাসান রাজী এবং সৈয়দ জালাল রাজ এর নাম পাওয়া গেছে। তিতুমীর তাদের বংশের জন্মগ্রহণ করেন তিতুমীরের পূর্বপুরুষ সৈয়দ শাহাদাত আলী ইসলাম প্রচারের জন্য আরব থেকে বাংলায় আসেন। এইজন্য তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদেরকে হযরত আলীর বংশধর বলে দাবি করতেন।
তিতুমীরের আসল নাম ছিল মীর নিসার আলী। ডাক নাম তিতুমীর। তিতুমীর শাহ সুফি মোহাম্মদ রহিমুল্লাহ মাইমুনা খাতুন সিদ্দিকীকে বিবাহ করেন।
শহীদ তিতুমীরের শিক্ষা জীবন
শিক্ষা জীবন সম্পর্কে আমাদের সবার জানার দরকার। তাই আজ আমি শহীদ তিতুমীরের শিক্ষা জীবন সম্পর্কে আলোচনা করছি। মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর এর বয়স যখন চার মাস চার দিন তখন তৎকালীন মুসলিম সমাজের সম্ভ্রান্ত পরিবারের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী তাকে ওস্তাদ মুন্সির লাল মিয়াকে আরবি,ফার্সি ও উর্দু ভাষা এবং অন্যান্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়।
মাতৃভাষার শিক্ষার প্রতি তার পিতা-মাতা মোটেই ছিলেন না। বাংলা ইংরেজি ও অংক বিষয়ের শিক্ষা অর্জনের জন্য পন্ডিত রাহুল ভট্টাচার্যকে নিযুক্ত করা হয়। তৎকালীন সময়ে বিহার শরীফ থেকে এক জনৈক্য পারদ শিক্ষা বিদ নিয়ামতুল্লাহ নামে চাঁদপুর গ্রামে আগমন করলে তাকে মীর নিসার আলীর প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
সৈয়দ মীর নিসার আলী তার প্রধান শিক্ষকের কাছে কোরআনের হাফেজ জন এবং আরবি ব্যাকরণশাস্ত্র ফারাজ শাস্ত্র হাদিস দর্শন তর্কশাস্ত্র তাসাউফ এবং আরবি ফারসি কাব্য ও সাহিত্য বিষয়ে বিশেষণ্ডিত্য লাভ করেন। সৈয়দ মির নিসার আলী আরবি, ফারসি ও বাংলা ভাষায় কথা বলতে বা বক্তৃতা দিতে পারতেন।
তিতুমীর যখন কলকাতায় অবস্থান করেন তখন পীরগঞ্জ আখাউড়ায় কুস্তি প্রতিযোগিতা হত।
বিজয়ীদের বেশ এনাম দেওয়া হত। কুস্তি প্রতিযোগিতায় তিতুমীরের বেশ সুনাম আছে।
শহীদ তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরি করেছিলেন কেন?
শহীদ তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরি করেছিলেন কেন? একথা অনেকেই জানে না। কিন্তু বাঁশের কেল্লা তৈরি করার কারণ আমাদের সবার জানা দরকার। শহীদ তিতুমীর একজন উদার ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। তার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল পরাধীন দেশ কে স্বাধীন করার। দেশ ও জাতিকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করার জন্য তিতুমীর তার সমগ্র জাতিকে সঙ্ঘবদ্ধ করেন।
আরো পড়ুনঃ দৈনিক ৫০০ টাকা ইনকাম অ্যাপস ২০২৫
এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। তিতুমীর তার সৈনিক এবং যুদ্ধের সমরস্ত্র নিরাপত্তার জন্য কলকাতার নিকট নারিকেল বাড়িয়ায় এক বিশাল বাঁশের তৈরি দুর্গ নির্মাণ করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে ১৮৩১ সালে শহীদ তিতুমীর পরাজিত ও নিহত হন। কথিত আছে যে শহীদ তিতুমীরকে এরা ইংরেজরা বাঁশের কেল্লাতেই হত্যা করেন।
এই দুর্গে তাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়।
শহীদ তিতুমীর কেন অমর হয়ে আছেন?
শহীদ তিতুমীর কেন অমর হয়ে আছেন? আপনি যদি একথা জানতে চান। তাহলে আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। শহীদ তিতুমীর মানুষের দুরবস্থা দেখে ইংরেজদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে স্বাধীন করার চিন্তা করেন। সেই চিন্তা থেকেই তিতুমীর মানুষকে সঙ্ঘবদ্ধ করে বিদ্রোহ করেন। এই বিদ্রোহ শুরু হয় ইংরেজদের সঙ্গে।
শহীদ তিতুমীর ব্রিটিশদের প্রতিহত করার জন্য একটি বড় বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। তিতুমীর বাঁশের কেল্লাটি তৈরি করেন তার সৈন্যদের নিরাপত্তা এবং যুদ্ধের সমরস্ত্র নিরাপত্তার জন্য। তিতুমীর ছিলেন একজন আদর্শবান দেশপ্রেমিক। দেশের জন্য তিনি সর্বদা চিন্তা করতেন। তিনি সব সময় পরাধীন দেশকে স্বাধীন করার চিন্তা করতেন।
তিনি শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাঙালির এই কিংবদন্তি তার
তৈরি বাসের কেল্লাতেই ব্রিটিশদের হাতে শাহাদাতবরণ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ও
জাতির জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
শহীদ তিতুমীরের সংগ্রামের কারণ কি?
শহীদ তিতুমীরের সংগ্রামের কারণ কি? আপনি যদি জানতে চান তাহলে আমার আর্টিকেলের সঙ্গে থাকুন। চলুন তাহলে দেরি না করে শহীদটি তুমি এর সংগ্রামের কারণ জানা যাক। তিতুমীর এবং বাঙালি জাতি ইংরেজদের কাছে পরাধীন ছিলেন। পরাধীনতার শিকলে বন্দি জীবন অতিশয় কষ্টের। একথা শহীদ তিতুমীর মর্ম মর্মে উপলব্ধি করতেন।
আরো পড়ূনঃ ইউটিউব থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা ইনকাম অ্যাপস
তাই তিনি পরাধীনতার গ্লানি থেকে বাঙ্গালী জাতিকে মুক্ত করার জন্য ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিহত করতে কলকাতার নিকটবর্তী স্থানে বারাসাতের কাছে নারিকেল বাড়িয়াই একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। শহীদ তিতুমীর ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্যক্তি। তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশিক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিতুমীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে আগ্রহী হন।
- ইংরেজদের কাছ থেকে বাঙ্গালীদের মুক্ত ও স্বাধীন করার জন্য তিনি সংগ্রাম করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
- তাছাড়াও তিনি কৃষকদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করার ইচ্ছা করেন।
- সৈয়দ মিন নিসার আলী ওরফে তিতুমীর ওয়াহাবি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাই তিনি ইংরেজদের সাথে লড়াই করতে চেয়েছিলেন।
- তিনি ব্রিটিশ শাসকদের নেতৃত্ব চিরতরে মুছে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
কত সালে তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন?
কত সালে তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন? একথা অনেকেই জানে না। চলুন তাহলে বিস্তারিত ১৮৩১ সালের জানা যাক তিতুমীরের বাঁশের নির্মাণের সময় কাল সম্পর্কে। ১৮৩১ সালের ২৩ শে অক্টোবর কলকাতার এক নিকটবর্তী নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে এ বাঁশের কেল্লাটি নির্মাণ করা হয়। এ বাসের কেল্লাটি দ্বি-স্তরবিশিষ্ট বাশ ও কাদা দিয়ে তৈরি ছিল।
এই কেল্লাটি মূলত ইংরেজদের প্রতিহত করার জন্য সৈন্যদের নিরাপত্তা এবং গোলাবারুদ
সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর আত্মরক্ষা এবং যুদ্ধের
গোলাবারুদ সংরক্ষনের জন্য তিনি এই বাঁশের কেল্লাটি নির্মাণ করতে ইচ্ছা করেন। শহীদ
তিতুমীর একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিতুমীর কেন বাঁশ দিয়ে এই দুর্গ নির্মাণ করেন?
শহীদ তিতুমীর কেন বাঁশ দিয়ে এ দুর্গ নির্মাণ করেন? একথা অনেকের কাছে অজানা। বাঁশ দিয়ে দুর্গ তৈরির কারণ আমাদের সবার জানা উচিত। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে সেনাবাহিনীর আত্মরক্ষা এবং গোলাবারুদ সংরক্ষণের জন্য একটি দুর্গ নির্মাণ করার প্রয়োজন মনে করেন তিতুমীর। কিন্তু তার হাতে সময় এবং অর্থ দুটোই কম ছিল।
আরো পড়ুনঃ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিপর্যয়ের কারণ
তাই তিনি কলিকাতার নিকটবর্তী নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে বাঁশ দিয়ে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। তিতুমীরের বাশের কেল্লার সন্ধান পেয়ে ইংরেজদের শাসক উইলিয়াম বেন্টিং তিতুমীরকে দমন করার জন্য এক বিশাল সামরিক বাহিনী প্রেরণ করেন। ফলে উভয়পক্ষে তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ইংরেজদের শক্তিশালী অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দিয়ে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লাকে গুঁড়িয়ে দেয়।
তারপরেও তিতুমীর ব্রিটিশদের কাছে মাথা নত করেন নি এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন
করেননি। তিতুমীর মনে করতেন পলায়ন করার চেয়ে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করাই
শ্রেয়। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ৪০ জন অনুসারীর সম্মুখে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে শহীদ হন।
তিতুমীরের এই আত্মত্যাগের কথা চিরকাল ইতিহাসের স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিতুমীর কেন বিখ্যাত হয়ে আছেন?
তিতুমীর কেন বিখ্যাত হয়ে আছেন চলুন একথা জেনে আসি। তিতুমীর ছিলেন একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী এবং অমৃত দেশপ্রেমিক। তিনি ব্রিটিশ শাসক এবং অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তিনি নিজে বাঁশের তৈরি একটি দুর্গ নির্মাণ এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নেতৃত্ব দেন।
তার নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া বিদ্রোহের জন্য তিতুমীর বিখ্যাত হয়ে আছেন। শহীদ তিতুমীর
বাঙালা আমিরাত নামক ছোট্ট একটি রাষ্ট্রের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসক
এবং তাদের অনুসারী অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
শহীদ তিতুমীরের বিখ্যাত হওয়ার আরো কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো-
- তিনি ব্রিটিশদের প্রতিহত করার জন্য বাঁশ ও কাদা দিয়ে স্তর বিশিষ্ট একটি বিশাল ভবন নির্মাণ করেন। সে এটি তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা নামে পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
- তিনি কৃষকদের অধিকার আদায়ের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। এই কারণে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
- তিতুমীর বাঙালা আমিরাত নামক স্বল্প স্থায়ী একটি রাষ্ট্রের বাদশা ছিলেন।
- তার নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া বিদ্রোহকে তিতুমীরের বিদ্রোহ বলা হয়। এই বিদ্রোহের কারণেই তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
- তিতুমীর এ যুদ্ধে পরাজিত হলে কখনো তিনি পলায়ন করেন নাই। তিনি মনে করেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করার চেয়ে শহীদ হওয়ায় শ্রেয়। এই নির্ভীক পরিচয় দেওয়ার কারণে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
- ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম বাংলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করে। এজন্য তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
- তিতুমীর ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং তাদের অনুগত্য অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
তিতুমীরের বিদ্রোহ বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে বিবেচনার যৌক্তিকতা
তিতুমীরের বিদ্রোহকে বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করার পিছনে কিছু
যৌক্তিকতা আছে। আপনাদের সুবিধার্থে যৌক্তিকতা গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
অনুগ্রহ করে পড়ে নিন।
- প্রথমতঃ ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার জনগণের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ ছিল।
- দ্বিতীয়তঃ এই বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভ এবং স্বাধীন ও ন্যায় ভিত্তিক দেশ ও সমাজ গঠন।
- তৃতীয়তঃ এই বিদ্রোহ বাংলার জনগণকে স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছে।
আবার কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন, তিতুমীরের বিদ্রোহকে স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে মনে করা যায় না। কারণ তারা এই বিদ্রোহকে একটি ধর্মীয় আন্দোলন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তাদের লক্ষ্য ছিল কিন্তু দেশ স্বাধীনতা্র জন্য নয়। এছাড়াও তারা আরো মনে করেন যে এই বিদ্রোহের কোন সুসংগঠিত রাজনৈতিক লক্ষ ছিল না বরং এটি ছিল স্বল্প স্থায়ী।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক মার্কেটিং করে দৈনিক ৫০০ টাকা ইনকাম অ্যাপস
তাই এটাকে একটি বৃহৎ এবং জাতীয় আন্দোলনের সাথে সামঞ্জস্য করা যুক্তিযুক্ত নয়। যদিও একদল তিতুমীরের আন্দোলনকে একটি বৃহৎ ও জাতীয় আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ রাখতে নারাজ হলেও কেহ কেহ বলেন, যদিও তিতুমীরের বিদ্রোহ সর্বস্থায়ী ছিল তথাপি এটি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
এই বিদ্রোহের দ্বারা বাংলার মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে ইংরেজ তথা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা সম্ভব। এইজন্য আমাদের এক হতে হবে।
শহীদ তিতুমীরকে কি কি সম্মাননায় ভূষিত করা হয়?
শহীদ তিতুমীরকে কি কি সম্মাননায় ভূষিত করা হয় এ কথা অনেকেই জানে না। বাংলার ইতিহাসে প্রথম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা তিতুমীরকে কি কি সম্মাননা দেওয়া হয়। তা আমাদের সবার জানা উচিত। শহীদ তিতুমীরের বিদ্রোহ বাংলাদেশের নেতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও উৎসাহ হিসেবে কাজ করছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর মোহাম্মদ আলী জিন্না কলেজকে সরকারি তিতুমীর কলেজ নামকরণ করা হয়। তিতুমীর হল নামে বুয়েটে একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয়। ১৯৭৪ সালের ১০ই ডিসেম্বর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিতুমীরের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিতুমীর নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি কমিশন করেন।
বিএনএস তিতুমীর নামে একটি জাহাজের নামকরণ করা হয়। তিতুমীর এক্সপ্রেস নামে একটি
আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে নীলফামারী ও রাজশাহী জেলার চিলাহাটি স্টেশনের মধ্যে।
তাছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনায় বারাসাত শহরে মূল বাসস্ট্যান্ডকে তিতুমীর
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল করা হয়েছে।
সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্ত
প্রশ্নঃ শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন?উত্তরঃ শহীদ তিতুমীর ছিলেন একজন বাঙালি বিপ্লবী।
প্রশ্নঃ তিতুমীরের প্রকৃত নাম কি ছিল?
উত্তরঃ তিতুমীরের প্রকৃত নাম ছিল সৈয়দ মীর নিসার আলী।
প্রশ্নঃ তিতুমীরের বাবা এবং মার নাম কি ছিল?
উত্তরঃ তিতুমীরের বাবার নাম ছিল সৈয়দ হাসান আলী এবং মার নাম ছিল সৈয়দা আবিদা রুকাইয়া খাতুন।
প্রশ্নঃ শহীদ তিতুমীরের পেশা কি ছিল?
উত্তরঃ শহীদ তিতুমীর পেশায় ছিলেন একজন মুজাহিদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী।
প্রশ্নঃ তিতুমীর কি জন্য বিখ্যাত ছিলেন?
উত্তরঃ তিতুমীর বাসের কেল্লা তৈরি, ওয়াহাবি আন্দোলন, ব্রিটিশ এবং জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রা্ম, কৃষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় ইত্যাদির ক্ষেত্রে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
প্রশ্নঃ তিতুমীর কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ বীর শহীদ তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ছিল সৈয়দ মীর নিসার আলী।
প্রশ্নঃ তিতুমীরকে পরাজিত করার জন্য কোন ইংরেজ নেতা নেতৃত্ব দিয়েছি্ল?
উত্তরঃ তৎকালীন ইংরেজ সেনাপতি কর্নেল হার্ডিং এর নেতৃত্বে তিতুমীরকে পরাজিত ও নিহত করা হয়েছিল।
প্রশ্নঃ তিতুমীর কত সালে পরাজিত ও নিহত হন?
উত্তরঃ শহীদ তিতুমীর ৩১ সালের উনিশে নভেম্বর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন।
প্রশ্নঃ তিতুমীরের প্রধান সেনাপতির নাম কি ছিল?
উত্তরঃ তিতুমীরের প্রধান সেনাপতির নাম ছিল মোস্তাক আহমেদ।
প্রশ্নঃ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে ছিলেন?
উত্তরঃ শহীদ তিতুমীর ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সিংহ পুরুষ ও অগ্নিযুগের শহীদ।
প্রশ্নঃ তিতুমীরকে কেন স্মরণ করা হয় ?
উত্তরঃ তিতুমীর ছিলেন ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসক ও জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে একজন লড়াকু সৈনিক। তিনি বীরত্বের সাথে লড়াই করে নিজের জীবনকে উৎসরে দিয়েছিলেন। তাই তিতুমীরকে স্মরণ করা হয়।
প্রশ্নঃ ইতিহাসে বারাসাত বিদ্রোহ কি?
উত্তরঃ শহীদ তিতুমীর ছিলেন ওয়াহাবী সম্প্রদায়ের নেতা। ইংরেজ বণিকরা ওহাবী সম্প্রদায়ের উপর শাস্তিমূলক কর আরোপ করেছিল। এজন্য তিতুমীর বিদ্রোহী হয়ে উঠলে তার আন্দোলন একসময় যুদ্ধের রূপ নেয়। এই আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল বারাসাতের নারিকেল বাড়িয়া। এটাই ছিল ইতিহাসে বারাসাত বিদ্রোহ।
লেখক এর মন্তব্য
শহীদ তিতুমীর কে ছিলেন? একথা আলোচনা করতে গিয়ে তিতুমীর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শহীদ তিতুমীর ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে নিজেকে সিংহ পুরুষের পরিচয় দিয়েছেন। তিতুমীরের বিদ্রোহকে বাংলার প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। যদিও এই যুদ্ধটি ছিল স্বল্প স্থায়ী এবং আঞ্চলিক বিদ্রোহ। তবুও এই বিদ্রোহের তাৎপর্য অনস্বীকার্য।
এই বিদ্রোহের কারণে বাংলার মানুষ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার দাঁড়াতে শিখছে। তিতুমীরের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ এর ফলে তার মানুষ পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য নিজেকে উৎসাহিত জাগরিত হয়েছে। তিতুমীরের বিদ্রোহকে জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে বিবেচনা করার ক্ষেত্রে বিতর্ক উপস্থাপন করা যায় না। তিতুমীরের বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
এটি মূলত বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url