পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ-নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধে বিপর্যয়

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আজ আমি আপনাকে বিস্তারিত বলে দেব, পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ কি ছিল। 

পলাশীর-যুদ্ধে-নবাব-সিরাজউদ্দৌলার-পরাজয়ের-কারণ

পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং ব্রিটিশদের মধ্যে। তাছাড়া নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে ছিলেন এ সম্পর্কে ইতিহাস জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। এই ইতিহাস আমাদেরকে বাস্তব জীবনে অনেক কিছু শিখিয়ে থাকে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ-নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে ছিলেন?

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ জানা থাকলে আমরা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারব। বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। তিনি মাত্র ২৩ বছর বয়সে বাংলার নবাবী লাভ করেন। অল্প বয়সে তার আধিপত্য অনেকেই তা সহ্য করতে পারত না। বাংলার নবাবী লাভ করে তিনি অল্প সময়ে বাংলার বিহার এবং উড়িষ্যা দখল করেন।

আরো পড়ুনঃ ১৬ই ডিসেম্বর পালিত হয় এক মহান বিজয় দিবস

এটা দেখে ব্রিটিশ শাসকদের গায়ে জ্বালা শুরু হয়। তাই তারা নবাব কে পরাজিত করার জন্য যুদ্ধ করার ইচ্ছা করেন। এ যুদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক অবসরণীয় ঘটনা। এই যুদ্ধে শুধু নবাবী পরাজিত হন নাই বরং সমগ্রহ ভারতবর্ষের উপর ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল। এ যুদ্ধের পরাজয়ের পিছনে বহুবিধ কারণ ছিল। 

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ গুলো আপনাদের সুবিধার্থে নিচে আলোচনা করা হলো।

  • ষড়যন্ত্রঃ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ ছিল নিজ দলের মধ্যে ষড়যন্ত্র  এবং বিশ্বাসঘাতকতা। যদি নিজ দলের ভেতর ষড়যন্ত্র না করতো, তাহলে নবাব পরাজিত হতেন না। তিনি যুদ্ধে এগিয়েছিলেন, যদি কেউ সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতেন। তাহলে তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করতেন। সিরাজউদ্দৌলার অল্প বয়সে নবাবী লাভ করায় নিজ দলের মধ্যে অনেকেই তা সহ্য করতে পারেনি। তাই তারা দলের মধ্যে অন্তঃষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
  • নবাবের সরলতাঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন একজন সরল সহজ এবং উদার প্রকৃতির মানুষ। বয়স অল্প থাকা তিনি তেমন কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি অল্প সময়ে মানুষকে বিশ্বাস করতেন। মির জাফরের মত মানুষকে বিশ্বাস করাই তাকে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হতে হয়েছিল।
  • যুদ্ধের সহযোগিতা না করাঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ শুরু হয়। প্রথমদিকে নবাবের সৈন্যরা অনেক তাই এগিয়ে ছিল। কিন্তু মীরজাফর সহ আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছিল কিন্তু নবাবের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। হলে নবাব যুদ্ধে পরাজিত হয়।
  • যুদ্ধের সামগ্রী নষ্ট হওয়াঃ যুদ্ধ চলার সময় হঠাৎ বৃষ্টি আসলে যুদ্ধের সামগ্রী তথা যুদ্ধের সমরাস্ত্র রাখার কোন জায়গা ছিল না। যুদ্ধ করার সমরাস্ত্র বৃষ্টিরপানিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই নষ্ট যুদ্ধ সামগ্রী নিয়ে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। ফলে নবাব পরাজয় বরণ করে।
  • অর্থনৈতিক সংকটঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সময়ে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল ও অস্থিতিশীল। ফলে সেনাবাহিনীর বেতন এবং যুদ্ধ সরঞ্জামের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের অভাব দেখা দেয়। যুদ্ধের সরঞ্জাম নষ্ট হলে নবাব আর কিনতে পারেন না। নষ্ট সমরাস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। তাই নবাব যুদ্ধে পরাজিত হয়। 
  • ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাঃ নবাবের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা যুদ্ধে পরাজিত হবার একটি কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। নবায়ন নবাব ছিলেন একজন সাহসী এবং দেশ প্রেমিক। তার আবেগপ্রবণতা তাকে প্ররোচিত করেছিল। তিনি তার বিশ্বস্ত উপদেষ্টার পরামর্শ শুনতেন না। অনেক সময় তিনি আবেগের বসে সিদ্ধান্ত নিতেন। এই ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতায় নবাবকে যুদ্ধে পরাজিত করে।
  • মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতাঃ মির জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নবাব কে যুদ্ধে পরাজিত করে। নবাবের প্রধান সেনাপতি হয়েও মীরজাফর ইংরেজদের সাথে নবাব কে পরাজিত করার গোপন চুক্তি করে। মির জাফরের সাথে জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ সহ উমি চাঁদ নবাব কে সাহায্য না করে ইংরেজদের সাহায্য করেছিল। মীর জাফরের এই বিশ্বাসঘাতকতা কে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত করে।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে ছিলেন?

নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে ছিলেন? অনেকেই তাকে চিনেন। বিশেষ করে যারা শিক্ষিত, তারা সবাই নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে চিনেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিচয় জানতে চাইলে আমার আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার শেষে স্বাধীন নবাব। এরপরে আর কেউ বাংলার মসনদে স্বাধীনভাবে বসতে পারেননি। 


যারা বসেছিল তারা ইংরেজদের দাসত্ব কায়েম করেছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুরো নাম ছিল মির্জা মোহাম্মদ সিরাজউদ্দৌলা। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার নবাব আলিবদি খান এর নাতি। নবাব আলীবদি খান এর তিন কন্যা ছিলেন। তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তিন কন্যাদের তিনি তার আপন ভাই হাজী মোহাম্মদ এর পুত্রদের সাথে বিয়ে ্দেন। 

তার ছোট মেয়ে আমেনা বেগমের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল। আমেনা বেগমের বড় পুত্রের নাম ছিল মীর্জা মোহাম্মদ তথা সিরাজউদ্দৌলা এবং মির্জা মেহে্দি। নবাব আলীবদি খান পার্টনার শাসনভার গ্রহণ করলে আমেনা বেগমের গর্ভে সিরাজউদ্দৌলার জন্ম হয়। সিরাজউদ্দৌলার জন্ম কেন অভাব সৌভাগ্য বলে মনে করেন। সিরাজউদ্দৌলা তার নানার কাছে ছিলেন অতি আদরের। 

নবাব সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসন দখল

নবাব সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসন দখল এক চমকপ্রদ ঘটনা। নবাব আলীবদি খানের কোন পুত্র সন্তান না থাকায় সিরাজউদ্দৌলায়েককে অতীত স্নেহের সাথে লালন পালন করেন। নবাব আলীবরদী খাঁ মারাঠা আক্রমণ করতে গেলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নানার সাথে যুদ্ধ সন্ধি হন। যুদ্ধে জয়লাভ করলে সিরাজকে পার্টনার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন।

সিরাজের বয়স অল্প থাকায় রাজা জানকী রামকে রাজ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেন। রাজা জানকীরাম কে রাজপ্রতিনিধি হিসেবে মেনে নিতে সিরাজউদ্দৌলা সন্তুষ্ট নন। একদিন সিরাজউদ্দৌলা তার কিছু বিশ্বস্ত সহচর এবং তার সহধর্ম নিয়ে লুৎফুন্নেছা কে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করেন।

জানকী রাম কে তার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বললে, তিনি তার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে ও স্বীকৃতি জানান। জানকীর আচরণে ক্রদ্ধ হয়ে সিরাজউদ্দৌলা দুর্গ আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষে বা বিতান্ডা শুরু হয় এবং হতা হতের ঘটনা ঘটে। এই খবর নবাব আলীবদি খার কাছে গেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।


সেদিন নবাব আলীবদি খাঁ, তার নাতি সিরাজউদ্দৌলাকে পাশে বসিয়ে দরবারে ঘোষণা দেন, আমার পরে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার সিংহাসনে বসবে সিরাজ। নবাব আলিবদি খান জীবিত থাকা অবস্থায়, ঢাকার নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৫৬ সালে ১০ই এপ্রিল নবাব আয়ুবদি খার মৃত্যু হলে, দৌলা সিংহাসনে আরোহন করেন। 

এ সময় সিরাজের বয়স হয়েছিল মাত্র ১৭ বছর। ১৭ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন এর ঘটনা তার আত্মীয় বর্গ মেনে নিতে পারেননি। এদের মধ্যে নবাব আলী বদি খার বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম এবং নোয়াজেস মোহাম্মদ ছিলেন অন্যতম।

কলকাতায় ইংরেজদের প্রভাব

কলকাতায় ইংরেজদের প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা যখন বাংলার সিংহাসনে আরোহন করেন ঠিক তখন থেকেই। তিনি ইংরেজদের দমন করার জন্য কলকাতার দুর্গ ও প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন এবং নবাবের অনুমতি ছাড়া যেন এ ধরনের কোন ঘটনা না ঘটে এ কথাও তিনি জানিয়ে দেন। কিন্তু ইংরেজরা নবাবের কথায় কর্ণপাত করেন নি।

বুদ্ধিমান নবাব বুঝতে পারেন যে, ইংরেজরা সুযোগ নিয়ে তার পরিবারে গৃহবিবাদের সন্ধান করছে। তাই তিনি তার খালা ঘসেটি বেগমের তাকে চূর্ণ করার জন্য সচেষ্ট হন। এরপর তিনি মতিঝিল প্রসাদ অধিকার করে ঘসেটি বেগমকে মুর্শিদাবাদের নিয়ে আসেন। এ মেয়ে সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনী কাসেম বাজার অবরোধ করেন।

পরে তিনি কাশিম বাজারের কুঠিয়াল এবং ওয়ারশন কে তার দরবারে ডেকে পাঠান। সেই সাথে তিনি তার আদেশ যথাযথ পালন করার জন্য একটি অঙ্গীকারনামা লিখতে নির্দেশ করেন। অবশেষে তারা এই অঙ্গীকারনামা লিখতে বাধ্য হন। ১৮ই জুন কলকাতা দুর্গা আক্রমণ করলে ২০শে জুন তা নবাবের দখলে আসে। নবাব মানিকচাদের হাতে তার দুর্গ ছেড়ে দিয়ে তিনি রাজধানীতে ফিরে আসেন।

পলাশীর যুদ্ধ কেন সংঘটিত হয়েছিল?

পলাশীর যুদ্ধ কেন সংঘটিত হয়েছিল, অনেকেই তা জানিনা। কিন্তু আমাদের সবার পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হবার কারণ জানা দরকার। তাহলে চলুন জানা যাক। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষে স্বাধীন নবাব। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাব হন। অল্প বয়সে সিংহাসনে আরোহন তার পরিবারের সদস্যরা। 

পলাশীর-যুদ্ধ-কেন-সংঘটিত-হয়েছিল
  • বিশেষ করে তার খালা ঘসেটি বেগম, রায় দুর্লভ এবং জগৎ সেঠের মতো ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হন। ফলে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
  • নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসার পর, কোন সময় ইংরেজরা তার সাথে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করেননি।
  • নবাব সিরাজউদ্দৌলার নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ও ইংরেজরা কলকাতা দূর্গ নির্মাণ করেন। যার কারণে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
  • নবাব দস্তক এর অপব্যবহার নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করেছিল। যার কারণে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা সংখ্যা কত ছিল?

নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য সংখ্যা কত ছিল অনেকেই মাঝে মতপার্থক্য দেখা যায়। পলাশীর যুদ্ধের নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার। মতান্তরে সৈন্য সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। শুধু মির জাফরের নেতৃত্বে সৈন্য সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার। অন্যদিকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার। 

পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও তার অনুসারীগণ ৪৫ হাজার সৈন্য নিয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। যার ফলে নবাব কে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হতে হয়েছিল। এটাই ছিল পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ। মীরজাফরের নবাব কে সিংহাসন থেকে বিতাড়িত করবার প্রবল ইচ্ছা ছিল। 

তাই তিনি ইংরেজি সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের সাথে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফরকে লালসার বসে করায়ত্ত করে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এদিকে  নবাব মীরজাফরের কূটনীতি স্বভাব বুঝে উঠতে পারেননি। নবাব মির জাফরের নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগ দিলে অনেক সৈন্য সামন্ত যুদ্ধের জন্য এগিয়ে যায়। 

কিন্তু মির জাফর বেশি সংখ্যক সৈন্যবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এমন তো অবস্থা দেখে রবার্ট ক্লাইভ মাত্র তিন হাজার সৈন্য সংখ্যা নিয়ে সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য সামন্তের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে নবাব পলাশীর আম্রকাননে পরাজয় বরণ করেন। যুদ্ধের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। পলাশীর যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

কিভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু হয়েছিল?

কিভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু হয়েছিল, তা আমাদের জেনে রাখা উচিত। আমরা এতক্ষণে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ জানতে পেরেছি। কিন্তু এখন আমরা তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানব। অনেক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে প্রশ্ন আসে। তাই আমাদের পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখা দরকার।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হলে তিনি তার রাজধানী ছেড়ে স্ত্রীর সন্তানকে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। এদিকে মীরজাফর তার সৈন্যদের দিয়ে নবাবকে খুঁজতে পাঠান। তিন দিন অনাহারে থাকবার পর নবাব এক বাজারে খাদ্যের সন্ধানে যান। সেই বাজারের কিছু লোক নবাব কে দেখে চিনতে পারেন। তারা এ খবরটি মির জাফরের কাছে দেন।

এই সংবাদ পেয়ে মীরজাফর নবাব কে আটক করে স্ত্রী সন্তানসহ রাজধানী মুর্শিদাবাদের নিয়ে আসেন। নবাব কে মুর্শিদাবাদের নিয়ে আসলে তার স্ত্রী লুৎফা বেগম এবং তার চার বছর বয়সী কন্যা উম্মে জাহরাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। মির জাফরের আদেশে তার পুত্র মিরনের তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদী বেগ নামের একঘাতক সিরাজউদ্দৌলা কে কারাগারে হত্যা করেছিলেন।

কথিত আছে যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করবার পর তার মৃতদেহ হাতির পিঠে করে সারা শহর ঘোরানো হয়েছিল। তাদের এই নৃশংস হত্যাকারী বাংলার ইতিহাসে বিরল।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে কোথায় বন্দী করা হয়েছিল?

নবাব সিরাজউদ্দৌলা কে কোথায় বন্দী করা হয়েছিল বিষয়টি অনেকের কাছেই অজানা। নবাব কে বন্দী করার বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু এ বিষয়ে সবারই জানা দরকার। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব। তার আপন ব্যক্তি বর্গের কারণে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেন। তাকে কারাগারে বন্দী করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।


যুদ্ধে পরাজিত হবার পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজধানী ছেড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে মহানন্দা নদী হয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ জোয়ার ভাটার কারণে নদীর পানি কমে যায়। এমত অবস্থায় নৌকা আটকা পড়ে। তিনি অনাহারে থাকা স্ত্রী সন্তানদের খাবারের জন্য এক মসজিদের বাজারে যান। বাজারের এক ফকির তাকে দেখে চিনতে পারে। 

কথিত আছে যে এই ফকির তার অপরাধের কারণে নবাবের দ্বারা শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এই শাস্তির কারণে ফকিরের কানকাটা গিয়েছিল। তাই তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নবাবের খবর মীরজাফরের সৈন্যদের কাছে দেয়। এই খবর পেয়ে মির জাফরের সৈন্যবাহিনী নবাব কে আটক করেন। পরে তাকে মুর্শিদাবাদ নিয়ে এসে কারাগারে পাঠান। এ সময় নবাবের সঙ্গে ছিল তার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা সহ আরো অনেকেই এবং তার চার বছর বয়সি কন্যা জাহুরা ও সঙ্গে ছিলেন।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রথম স্ত্রীর নাম কি?

নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রথম স্ত্রীর নাম হচ্ছে লুৎফুন্নেসা। অনেকেই হয়তো তা জানে না। কিন্তু অনেকে লুৎফুন্নেছা কে তৃতীয় স্ত্রী বলে মনে করেন। কিন্তু লুৎফুন্নেছা নবাবের প্রথম স্ত্রী। তাছাড়া দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল জেবুল নেতা বেগম এবং তৃতীয় স্ত্রীর নাম ছিল উমদাদুন্নেসা বেগম। নবাবের কাছে সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী ছিলেন লুৎফুন্নেছা। 

এই লুৎফুন্নেসা কেন নবাব বিয়ে করেন এক রাজমহলে। লুৎফুন্নেসা ছিলেন রাজমহলের ফৌজদার আতাউল্লাহ খানের মেয়ে। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নবাবের সঙ্গে ছিলেন। তিনি ১০ ই নভেম্বর ১৯৯০ সালে মুর্শিদাবাদে মৃতবরণ করেন। তাকে খোশবাগে নবাবের পাশেই দাফন করা হয়।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধর

নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধর সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো। নবাব আলী বদি খার তিন কন্যা ছিলেন। আলী বদি খার কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তিন কণ্যাকে বিয়ে দেন, তার আপন ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে। সিরাজউদ্দৌলার মাতা আমেনা বেগম ছিলেন নবাব আলীবদিখানের তৃতীয় কন্যা। আমেনা বেগমের দুই পুত্র ছিল। 

এক মির্জা মোহাম্মদ সিরাজউদ্দৌলা এবং দুই মির্জা মেহেদী। নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং নবাব আলীবদি খান ছিলেন নানা-নাতি সম্পর্ক।

  • নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রথম স্ত্রী ছিলেন লুৎফুন্নেসা বেগম।
  • লুৎফুন্নেছা বেগমের কন্যা উম্মে জহুরা বেগম
  • প্রথম বংশধর-উম্মে জোহরা বেগম ওরফে কুদসিয়া বেগম।
  • দ্বিতীয় বংশধর-উম্মে জোহরা বেগমের ছেলে শমসের আলী খান।
  • তৃতীয় বংশধর-শমসের আলী খানের ছেলে লুৎফে আলী খান।
  • চতুর্থ বংশধর-লুৎফে আলী খানের মেয়ে ফাতেমা বেগম।
  • পঞ্চম বংশধর-হাতে মা বেগমের মেয়ে হাসমত আরা বেগম।
  • ষষ্ঠ বংশধর-হাসমত আরা বেগমের ছেলে সৈয়দ জাকি রেজা।
  • সপ্তম বংশধর-সৈয়দ জাকি রেজার ছেলে সৈয়দ মর্তুজা।
  • অষ্টম বংশধর-সৈয়দ মর্তুজার ছেলে গোলাম মোস্তফা।
  • নবম বংশধর-সৈয়দ গোলাম মোস্তফার ছেলে সৈয়দ আব্বাস আরেব।

পলাশীর যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়েছিল?

পলাশীর যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়েছিল? যুদ্ধের অধিনায়ক কে ছিলেন অনেকেই হয়তো জানেন না। বাংলা বিহার এবং উড়িষ্যার নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। তিনি ক্ষমতা থাকা অবস্থায় ইংরেজরা তার রাজ্য দখল করতে আসে। তাই নবাব যুদ্ধের ঘোষণা দেন। ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল নবাবের পলাশী নামক প্রান্তরে ১৭৫৭ সালে ২৩ শে জুন তারিখে। 


এই যুদ্ধে নবাব পরাজিত হয়েছিলেন তার দলে থাকা ব্যক্তিবর্গের ভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার কারণে। নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের ভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে ইংরেজদের এ বিজয় নিশ্চিত হয়। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় হলে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যা দখল করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নেতৃত্ব দেন লর্ড ক্লাইভ এর প্রধান সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ। এই যুদ্ধের পর লর্ড ক্লাইভ বাংলার গর্ভনর নিযুক্ত হন। 

নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারীর নাম কি?

নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারীর নাম আমরা সকলেই কমবেশি জানি। আমরা যদি এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকি তাহলে অবশ্যই নবাবের হত্যাকারের নাম জেনে থাকবো। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হলে তিনি তার রাজধানী ছেড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে চলে যেতে থাকেন। কিন্তু মীরজাফরের সৈন্যদল তাকে আটক করে স্ত্রী এবং কন্যা সহ কারাগারে পাঠান। 

নবাব-সিরাজউদ্দৌলার-হত্যাকারীর-নাম-কি-ছিল

মীরজাফরের আদেশে তার পুত্র মিরনের তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদ বেগ এর ছুরিকাঘাতে নবাব কে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। কথিত আছে যে, নবাবের এই মৃতদেহটিকে হাতির পিঠে বেঁধে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যাতে নিয়ে বেড়ানো হয়। ইতিহাসে এমন নিশংস হত্যাকান্ড আর দ্বিতীয় ঘটে নি।

লেখক এর শেষ কথা

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ে থাকেন, তাহলে আশা করি আপনি পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ সহ অন্যান্য বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। 

আমার আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আমি এ ধরনের তথ্যবহুল আর্টিকেল নিয়মিত আপডেট করে থাকি। আপনারা যদি আমাকে উৎসাহ দিয়ে থাকেন, তাহলে এ ধরনের তথ্যবহুল আর্টিকেল লিখতে তৎপর হব। এতক্ষণের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url