তেলাকুচা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা। তেলাকুচা পাতার আশ্চর্যজনক পুষ্টিগুণ
তেলাকুচা পাতার উপকারিতা অনেকে জানে না। আপনি কি তেলাকুচা পাতার উপকারিতা ও
অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমি
আপনাকে বলে দিব, তেলাকুচা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
তেলাকুচা একটি ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদ। রাস্তার ধারে, বন-বাধারে, ঝোপ জঙ্গলে জন্মে থাকা
তেলাকুচা হীরার চেয়েও বেশি মূল্যবান। এর গুণের কথা জানলে আপনি এর কদর করে রাখার
জায়গা খুঁজে পাবেন না। চলুন তাহলে দেরি না করে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা ও
অপকারিতার কথা বিস্তারিত জেনে আসি।
পোস্ট সূচীপত্রঃ তেলাকুচা পাতার আশ্চার্যজনক পুস্টিগুন
- তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
- তেলাকুচা পাতা খাওয়ার নিয়ম
- ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে তেলাকুচা পাতার রেসিপি
- ইলিশ মাছের শুটকি দিয়ে তেলাকুচা পাতার রেসিপি
- গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা পূরণ করে তেলাকুচা
- চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা
- তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুন
- তেলাকুচার গাছ, পাতা,ফুল ও ফল দেখুন
- তেলাকুচার আশ্চার্যজনক পুষ্টিগুণ
- তেলাকুচার পাতা কিভাবে রান্না করে খাবেন?
- তেলাকুচা পাতার অপকারিতা
- লেখক এর শেষ মন্তব্য
তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
তেলাকুচা পাতার উপকারিতা আপনারা অনেকেই জানেন না। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা
তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চায়। আজ আমি আপনাকে তেলাকুচা পাতার
উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলে দিব। তেলাকুচা এমন একটি গাছ, যেটি গ্রামের কোন
ঝোপ-ঝাড়ে কিংবা শহরের কোন সড়কের বিদ্যুতের তার আঁকড়ে ধরে বেড়ে ওঠে তেলা্কুচার
লতা।
আরো পড়ুনঃ
সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
এ পাতার রং গাড়ো সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে এবং ফুল দেখতে লাউ ফুলের মত সাদা এবং
তেলাকুচার ফল শশা পরিবারভুক্ত অর্থাৎ দেখতে শসার মত অনেকটাই। সবুজ ফলটির পাকলে
সেদুর বর্ণের হয়ে থাকে। হল পাকার সাথে সাথেই পাখিরা এ ফল খেতে ভিড় করে।
তেলাকুচার ফল পাখিদের প্রিয় খাবার। বিশেষ করে শালিক, বুলবুলি, বসন্তবৌড়ী এবং
বেনে বউ পাকা ফল খেতে পছন্দ করে।
এই ফলের লোভে সারাক্ষনের লতার পাতার উপরে নাচা-নাচি করে ফল বিচরণ করে। সারা বছরই
তেলাকুচার ফুল ফোটে। তবে বর্ষা মৌসুমে ফুলের প্রাচুর্য বেশি থাকে। তেলাকুচ আর
পাতা অনেকেই শাক হিসেবে খেয়ে থাকে। তেলাকুচা পাতার উপকারিতা নিচে আলোচনা করা
হলো
- এ তেলাকুচা পাতার রস মাথার ঠান্ডা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- তেলাকুচার পাতা্র রস খেলে ডায়াবেটিস ভালো হয।
- কবিরাজী চিকিৎসকগণ তেলাকুচার পাতাকে কুষ্ঠ রোগের ওষুধে ব্যবহার করেন।
- হাঁপানি ও ব্রণ কাটিস রোগের ঔষধের জন্য ব্যবহার করেন।
- জ্বর ভালো করতে তেলাকুচার পাতা ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া জন্ডিস নিরাময়ে পাতা ব্যবহার করে থাকেন।
- রক্ত ও সাদা আমাশয় এর জন্য তেলাকুচা পাতা দিয়ে ওষুধ তৈরি করেন।
- ছুলির ঔষধে তেলাকুচার পাতা ব্যবহার করে থাকেন।
- তেলাকুচার মাঝে ইষ্টবিলাইজিং ও এন্টিহিস্টামিন জাতীয় উপাদান আছে।
- ডাক্তাররা তাদের গবেষণায় বলেছেন, তেলাকুচা প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করতে পারেন।
- তেলাকুচা প্রোটিন ও চর্বি ভাঙতে সহযোগিতা করে।
- তেলাকুচা খাবারের ফলে আপনার শরীরের অবসন্নতা কাটবে, তাছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ভালো থাকবে।
- তেলাকুচাই আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা খেলে আপনার খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখে।
- তেলাকুচার পাতা খাবারের ফলে আপনার কিডনিতে পাথর হতে পারবে না। তেলাকুচার পাতা কিডনিতে পাথর হতে বাধাগ্রস্ত করে।
তেলাকুচা পাতা খাওয়ার নিয়ম
তেলাকুচা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সবার জানা উচিত। তেলাকুচার পাতা, ফল
ও কচি ডগা অনেক এলাকায় খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তেলাকু্চার ফল সবজি
হিসেবে খাওয়া যায় আর পাতা, ডগা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। বলা চলে তেলাকুচা এক
প্রকারের ভেষজ উদ্ভদ। তবে স্থানীয়ভাবে অনেকেই কুচিলা, তেলা, তেলাকুচ, তেলাকুচ্চা
ও বিম্ব নামে ডাকা হয়।
আরো পড়ুনঃ
সজনে পাতার আশ্চার্যজনক ২০টি পুস্টিগুন
তেলাকুচা পাতার রস ডায়াবেটিস রোগে বিশেষ উপকারী।হাই প্রেসার ও জন্ডিসের জম এই
তেলাকুচার পাতা।গ্রামে এ পাতার রস মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করা
হয়।তেলাকুচার কচি ফল ও কচি পাতা দিয়ে সুপ খাওয়া যায়।কচি তেলাকুচার পাতা সালাদ
হিসেবে আপনি খেতে পারেন।তেলাকুচার ফল দুই ভাগ করে কেটে পটলের মতো তেলে ভাজি করে
খেতে পারেন।
দ্রুত উপকার পাওয়ার জন্য তেলাকুচার কান্ড সহ পাতা বেটে রস করে নিয়মিত আধা কাপ
পরিমাণে সকাল ও বিকেলে খেতে পারেন। তাহলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।
ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে তেলাকুচা পাতার রেসিপি
ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে তেলাকুচা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জানা
দরকার। কারণ তেলাকুচার পাতা আমাদের বাজারে কিনতে যেতে হয় না। চাষাবাদের কোন
ঝামেলা নেই। হার হামেশাই হাতের কাছে পাওয়া যায়। এমন একটি উপকারী পাতা ব্যবহার
করলে আমাদের শরীরের যাদের ওজন বেশি।
তারা ওজন কমাতে তেলাকুচার পাতার রেসিপি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
তেলাকুশের পাতা বহুবিধ পুষ্টিগুণে এবং ঔষধি গুনে ভরপুর। ওজন নিয়ন্ত্রণ সহ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমরা তেলাকুসার পাতাকে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি। কিভাবে
তেলাকুচার পাতাকে খাদ্য তালিকায় রেসিপি হিসেবে রাখবো, এখন তা আপনাদের সাথে
শেয়ার করব।
প্রথমত তেলাকুচার পাতাকে আমরা সাধারণ তো শাকের মতো ভাজি করে খেতে পারি। যদি ইচ্ছা
করি এটাকে শুটকি মাছ দিয়ে সুন্দর একটি রেসিপি তৈরি করে নিতে পারি।
তেলাকুচা পাতার সুপ তৈরি করে খেতে পারি।
বিভিন্ন সবজির উপকরণ হিসেবে তেলাকুচার পাতা ব্যবহার করতে পারি।
সালাদের উপকরণ হিসেবে সালাদের সঙ্গে তেলাকুচার পাতা ব্যবহার করতে পারি।
ইলিশ মাছের শুটকি দিয়ে তেলাকুচা পাতার রেসিপি
ইলিশ মাছের শুটকি দিয়ে তেলাকুচা পাতার রিসিপি তৈরী করবো যেভাবে। ঘরে কিংবা
বাজারের যেকোনো মাছের শুটকি হলেই চলবে। আজকে আমি বলে দিব লোনা ইলিশের শুটকি দিয়ে
তেলাকুচা পাতার রেসিপি তৈরি। এক খণ্ড লোনা ইলিশের টুকরা পানিতে ভিজে রাখি।
যাতে করে অতিরিক্ত লবণ লেগে না থাকে।
আরো পড়ুনঃ
কলা খাওয়ার উপকারিতা
এরপর কতগুলো তেলাকুচার কচি পাতা পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিন। পাতা
টুকরা গুলো একেবারে ছোট না হলেও চলবে। এরপর আপনার রান্না করার পছন্দ মত তেল দিয়ে
কড়াইয়ের মাঝে কিছু পিঁয়াজ কুচি, পরিমাণ মত রসুনকুচি, কয়েকটি কাঁচা মরিচ দিয়ে
আগুনের তাপে ভাজতে থাকি।
পিয়াজ কুচি একটু লাল হলে পরিমাণ মতো লবণ, পরিমান মত মরিচের গুঁড়া, হলুদের গুড়া
দিয়ে কষাতে থাকি। খেয়াল করব যাতে কসানি পেয়াজগুলো পুড়ে না যায়। হালকা করে
পানি দিয়ে কষাতে থাকি। এরপর ইলিশের টুকরা দিয়ে দুই তিন মিনিট কষাতে থাকি। এরপর
পাতা দিয়ে হালকা করে নাড়তে থাকি।
দেখবেন অল্প সময়ে পাতা গুলো চুপসিয়ে আসছে। একটু নেড়েছেড়ে চুলা থেকে কড়াইতে
নামিয়ে নেই। দেখবেন সুন্দর একটা রেসিপি তৈরি হয়ে গেছে। এর থেকে সুন্দর একটা গান
বের হয়ে আসছে। এভাবে শুটকি মাছ দিয়ে তেলাকুসারপাতা রান্না করে খাওয়া যায়।
গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা পূরণ করে তেলাকুচা
গর্ভবতী মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা পূরণ করে তেলাকুচা। সন্তান প্রসবের পর অনেক
প্রসূতি মাতা স্থানে দুধ আসে না। আবার কারো শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যায়
রক্তস্বল্পতার কারণে। এইসব রোগে এক তেলা- কুচায় ম্যাজিকের মত কাজ করবে। এমনত
অবস্থায় তেলাকুচার রস হালকা গরম করে মধুর সাথে মিশিয়ে নিন।
প্রতিদিন দুইবার করে সাত দিন নিয়োগ করে খেলে বুকের দুধের স্বল্পতা পূরণ করবে
এবং সেই সাথে শরীরের রক্তস্বল্পতা পূরণ করতে সাহায্য করবে।
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ
করে থাকেন। চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতার গুরুত্ব অপরিসীম অনেকেই জানে না। পাতার রস
চুলের জন্য কতগুলো নিউ হেয়ার প্যাক এবং একটি ভিন্নধর্মী উপকারী উপাদান। আপনি যদি
তেলাকুচা পাতার রস চুলে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
পাবে।
কারণ তেলাকুচা পাতা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন
যারা চুলের যত্নে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ঘরোয়া উপায়ে চলে
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চাইলে তেলাকুচা পাতার কোন বিকল্প নেই।
চুলের যত্নে তেলাকুচা পাতা ব্যবহারের যে সুবিধা গুলো রয়েছে। তা নিচে আলোচনা করা
হলোঃ-
- আপনার চুল পড়া বন্ধ করবে।
- চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করবে।
- চুল ঘন কালো ও লম্বা করবে।
- মাথার খুশকি দূর করবে।
- চুল নরম ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করবে।
- মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করবে।
- আপনার চুলকে রেশমি করবে।
তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুন
তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তেলাকুচা পাতায় কি কি
ঔষধি গুন আছে, তা আমাদের সবার জানা দরকার। তাই আজকে আমি আমার আর্টিকেলে তেলাকুচা
পাতায় কি ধরনের ওষুধিগুণ রয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনা করব। প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা
যদি তেলা্কুচা পাতার পুষ্টিগুণ ও ওষুধ সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আমার আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমি আমার আর্টিকেলে তেলাপোতা পাতার ঔষধিগুণ সম্পর্কে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেলাকুচাঃ আপনাদের মাঝে যদি কারো ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তাহলে আপনাকে নিয়মিত তেলাকুচা কান্ডের পাতা শেষে রস করে প্রতিদিন সকাল ও বিকেল খেতে হবে। কারণ তেলাপোতা পাতার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর। তাছাড়াও আপনি রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
- পা ফোলা রোগঃ আপনার পরিবারের কিংবা কোন প্রতিবেশীর যদি পা ফোলা রোগ দেখে থাকেন। তাহলে আপনি তাকে তেলাকুচার মূল ও পাতাসিসের রস তৈরি করে প্রতিদিন তিন থেকে চার চামচ সকাল বিকাল খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। কারণ তেলাকুছা পাতার রস পা ফোলা রোগে বিশেষ উপকারী।
- জন্ডিস নিরাময়েঃ তেলাকচার পাতা জন্ডিস নিরাময় বিশেষ কার্যকর। তেলাকু স্যার পাতায় আছে জন্ডিস নিরাময়ক ঔষধিগুন। জন্ডিস রোগীদের তেলাকচার পাতার কাণ্ড এবং মূল শেষে রস করে জন্ডিস রোগীকে খাওয়ালে জন্ডিস থেকে মুক্তি পা...
- কাশি নিরাময়ঃ কাশি নিরাময়ে তেলাকুচার পাতা অত্যন্ত কার্যকর। আপনারা কাসি নিরাময়ের তেলাকচার পাতা ব্যবহার করতে পারেন। চার চামচ তেলাকুছা পাতার রস কুসুম গরম করে এর সাথে আধা চামচ মধু মেশিইয়ে খেলে কাশি থেকে উপশম পাওয়া যায়।।
- আমাশয় নিরাময়ঃ আপনাদের মাঝে কারো যদি আমাশার সমস্যা থাকে তাহলে তেলাকুসার মূল ও পাতার রস তিন থেকে চার চামচ করে নিয়মিত সাত দিন খেতে পারলে আশা করি আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
- শ্বাসকষ্ট নিরাময়ঃ আপনার যদি ঠান্ডা জনিত কারণে এজমা দেখা দেয়। কিম্বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তাহলে আপনি তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে আধা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে আপনার এই শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দূর হতে পারে। এই পদ্ধতি আপনি এক সপ্তাহ করতে পারেন।
- বুকের দুধের স্বল্পতাঃ প্রসূতি মায়ের সন্তান জন্ম দানের পর যদি দুধ না আসে এবং শরীর ভেসে ফেকাসে হয়ে যায়। এ সমস্যাটি প্রসূতি মা এবং সন্তানের জন্য একটি জটিল সমস্যা। এই সমস্যা প্রতিরোধে ঘরোয়া উপায়ে যদি প্রতিদিন একটি করে তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন তাহলে প্রসূতি মায়ের বুকের সমস্যার সমাধানে বিশেষ কার্যকর।
- রক্ত স্বল্পতায়ঃ যদি কারো শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা যায় এবং শরীর ফেকাসে হতে দেখা যায়। তাহলে আপনারা তাকে তেলাকুচার পাতার রস ছেঁচে মধুর সঙ্গে নির্মিত খাওয়াতে পারেন। নিয়মিত খাওয়ানোর ফলে দেখা যাবে তার শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে রক্তের পরিপূর্ণতা আসছে। তেলাকচার পাতায় আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের রক্ত দূর করতে সাহায্য করে।
- ফোড়া ও ব্রণ নিরাময়েঃ ফোড়া ও ব্রণ নিরাময়ে তেলাকচার পাতা বিশেষ কার্যকর। আপনি যদি ফোড়া ও ব্রণের উপরে তেলাকুচা পাতার রস এপ্লাই করতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পেতে পারেন। এজন্য আপনাকে সকাল বিকাল নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করতে হবে।
তেলাকুচার গাছ, পাতা,ফুল ও ফল দেখুন
তেলাকুচা গা্ছের, পাতা, ফুল ও ফলের ছবি দেওয়া হলো
তেলাকুচার ফুল ও ফল।
তেলাকুচার আশ্চার্যজনক পুস্টিগুন
তেলাকুচার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই আমরা জানি না। যদিও আমাদের কাছে তেলাকুচার
গাছ-পাতা অনেক পরিচিত। কোন কিছু খাবারের আগে তার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের
ধারণা থাকা দরকার। তেলাকুচা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনাদের সুবিধার্থে নিচে
আলোচনা করা হলো। ১০০ গ্রাম তেলাকুচা পাতায় যে পরিমাণে পুষ্টিগুণ বিদ্যমান
সেগুলো হল
- প্রোটিনঃ ১.২ গ্রাম।
- ফাইবারঃ ১.৬ গ্রাম।
- আইরনঃ ১.৪ মিলিগ্রাম।
- ক্যালসিয়ামঃ ৪০ মিলিগ্রাম।
- এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন মিনারেলো ও বিটাকেরোটিন।
তেলাকুচার পাতা কিভাবে রান্না করে খাবেন?
তেলাকুসার পাতা কিভাবে রান্না করে খাবেন তা আমাদের জানা উচিত। নিচে
তেলাকুছা পাতার রান্না করে খাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- শাক হিসেবেঃ আপনি তেলাপোচার পাতাকে ছাক হিসেবে ভাজি করে খেতে পারেন। তাছাড়া তরকারির উপকরণ হিসেবে সবজির সাথে রাখতে পারেন এবং ডানের সাথে রান্না করেও খেতে পারেন। তেলাকোষ আর পাতাকে পরিষ্কার করে ছোট ছোট করে কাটতে হবে। এরপর পেঁয়াজকুচি, রোশন কুচি রসুন কুচি, এবং মরিচকুচি তেলে ভাজি করতে হবে। পেঁয়াজকুচি হালকা বাদামি রঙের হলে তেলাকুচার পাতা দিতে হবে। এরপর নেড়ে ছেড়ে পানি শুকিয়ে গেলে নামাতে হবে। খুব অল্প সময়ে এ পাতার রান্না করা হয়।
- তেলাকুচা পাতার ভর্তাঃ আপনি তেলাকুচার পাতা ভর্তা খেতে পারেন। এ পাতার ভর্তা খুবই সুস্বাদু। তেলাকুচার কচি পাতাগুলো পরিষ্কার করে সিদ্ধ করতে হবে। পরিমাণ মতো পেঁয়াজকুচি, রসুন এবং কাঁচা মরিচ তেলে ভেজে নিতে হবে। এরপর সবগুলো বেটে ভর্তা করে তাতে লবন এবং শরিষার তেল দিতে হবে। আপনি খেলে বুঝতে পারবেন তেলাকুছা পাতার ভর্তা কত সুস্বাদু।
- তেলাকুচা পাতার সালাদঃ আপনি তেলাকুচার পাতার সালাদ খেতে পারেন। টমেটো, গাজর কিম্বা শসা কুচির সাথে তেলাকুচা পাতা যোগ করতে পারেন। সালাদের সাথে পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ কুচি এবং অলিভ অয়েল তেল সহ পরিমান মত লবণ দিলে সালাত অনেক আকর্ষণীয় হয়। খেতেও খুবই সুস্বাদু হবে।
- তেলাকুচা পাতা সুপঃ তেলাকুচা পাতার সুপ খেতে অনেক ভালো লাগে। সুপ তৈরি করতে আপনাকে তেলাকুচার কচি পাতাগুলো পরিষ্কার করে কুচি করে কাটতে হবে। এরপর পরিমাণ মতো পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, মরিচ বাটা, পরিমাণ মতো লবণ এবং পানি দিয়ে সুপ রান্না করতে হবে।
তেলাকুচা পাতার অপকারিতা
তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। আমাদের জানা উচিত
কোন কিছুই অতিরিক্ত ভক্ষণ করা ভালো নয়। অতিরিক্তভোজনের সুখ নেই। সবকিছুই
পরিমাণের মধ্যে থাকা উচিত। তাই তেলাপোসা পাতার খাবারের সময় সতর্কতার সাথে
নিয়ম মেনে পরিমিত খাওয়া উচিত। দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য আপনি যদি তেলাকুচার পাতা
পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে থাকেন।
তাহলে আপনার ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এমনকি পেট খারাপ হতে পারে। আপনি যদি
দীর্ঘদিন ধরে কোন অসুখে ভোগেন, তাহলে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তেলাকুচা
পাতা খেতে হবে। তেলাকুচা পাতাকে ঔষধিপাতা বলা হয়। তাই এটার গুনাগুন সম্পর্কে
জেনে খাওয়া উচিত। না জেনে খেলে বিভিন্ন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে
পারে।
- এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ তেলাকুচা পাতা খাবারের ফলে যদি কারো শরীর ফুলে ওঠে, শরীর চুলকায় এবং বমি বমি ভাব দেখা যায় সাথে সাথে তেলাকুচা পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য সর্তকতাঃ গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য সতর্কতা রেখে তেলাকুচা পাতা খাওয়া উচিত। তেলাকুচা পাতায় কিছু উপাদান আছে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ সময় তেলাকুচা পাতা খাওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখক এর শেষ মন্তব্য
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এ কথা জানা যায় যে, তেলাকুচা পাতা খাওয়ার উপকারিতা
অপকারিতা, তেলাকুচা পাতার ঔষধি গুন, তেলাকুছা পাতার পুষ্টিগুণ এবং চুলের যত্নে
তেলাকুচা পাতার ব্যবহার সম্পর্কে পুরোপুরি আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়াও
তেলাকুচা পাতা খাওয়ার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা
হয়েছে।
আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকে তাহলে আমি আশা করব
আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। তবে তেলাকুচা পাতায় যেমনি উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। জেনে বুঝে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
তেলাকুচা পাতা খাওয়া দরকার।
আমার লেখা আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে তবে নিয়মিত এ ধরনের তথ্য আর্টিকেল
পেটে আমার ওয়েবসাইট ফলো করুন। এতক্ষণে সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য
ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url